এয়ার ইন্ডিয়ায় অচলাবস্থা কাটানোর জন্য চরম হুঁশিয়ারি দিলেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। ধর্মঘটীদের প্রতি কড়া বার্তায় তিনি আজ জানিয়ে দিলেন, যাত্রীস্বার্থ নিয়ে নিতান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করছেন ‘অসুস্থ’ পাইলটেরা। অবিলম্বে ধর্মঘট না উঠলে এয়ার ইন্ডিয়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপও করতে পারে কেন্দ্র। বা বাতিল করা হতে পারে তাদের ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত পুনরুজ্জীবন প্যাকেজও। কেন্দ্র ধর্মঘটীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসতে সবসময় তৈরি। কিন্তু তার জন্য দরাদরি ছেড়ে আগে ধর্মঘট তুলে পরিষেবা স্বাভাবিক করতে হবে। পাশাপাশি, দিল্লি হাইকোর্টের রায় না মানায় ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বারস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের। বরখাস্ত করা হয়েছে, সংস্থার আরও নয় বিমানচালককেও।
কেন্দ্র অবস্থান কড়া করলেও তৃতীয় দিনেও ধর্মঘট ওঠার লক্ষণ নেই। ধর্মঘট ‘বেআইনি’ বলে দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে কার্যত ‘তোয়াক্কা’ না করেই ধর্মঘটীরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে তাঁরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরছেন না। যদিও ইঙ্গিত মিলেছে, পরিস্থিতি বিচার করে সুর নরম করার পথেই হাঁটতে চলেছেন ‘বিদ্রোহীরা’। সূত্রের খবর, বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন ধর্মঘটীরা। দু’পক্ষই আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হলেও, সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমার আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সমস্যা বাড়িয়ে, এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের পথেই হেঁটে ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছেন কিংফিশার এয়ারলাইন্সের বেশকিছু পাইলট। যার জেরে বাতিল করতে হয়েছে নয়াদিল্লি থেকে তাদের ১৫টি উড়ান। ‘অসুস্থ’ পাইলটেরা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের বকেয়া না মেটানোয় এই পদক্ষেপ।
টানা ধর্মঘটের জেরে এ দিন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার পরিষেবা। কালই দিল্লি ও মুম্বই থেকে পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে উড়ান বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছিল। এ দিন সেই তালিকা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, টরন্টো, লন্ডন, প্যারিস, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট-সহ আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি উড়ানের বুকিং আপাতত ১৫ মে অবধি মুলতুবি রাখা হচ্ছে। উড়ান বন্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটেও। একের পর এক উড়ান বাতিলের জেরে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়া। ৩৬টির মতো আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করতে হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক প্রায় পনেরো কোটি টাকা। দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরে উড়ান ধরার জন্য অধৈর্য যাত্রীদের অভিযোগ, আগাম কোনও কারণ না দেখিয়েই একের পর এক উড়ান বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে ভিসা। সরকার ও ধর্মঘটীদু’পক্ষের দর কষাকষিতে যাত্রীদের ভোগান্তি যে চরমে উঠেছে, তা নিয়ে হেলদোল নেই কারও।
তবে কেন্দ্র যে এ বিষয়ে অবস্থান আরও কঠোর করছে, তার প্রমাণ মিলেছে মাত্র তিন দিনে ৪৫ জন বিমানচালককে বরখাস্ত করার মধ্যেও। বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ধর্মঘটীরা যেখানে হাইকোর্টের কথাই শুনছেন না, সেখানে তাঁরা মন্ত্রীর কথা শুনবেন না সেটা আশা করা যায় না। তবে কোর্টের রায় না মেনে তাঁরা যে আইন ভাঙছেন সেটা তাঁদের মাথায় রাখতে হবে। তাঁদের মনে রাখতে হবে, যাত্রীস্বার্থের কাছে ধর্মঘটীরা কেউই অপরিহার্য নন। সব বিষয়েই আলোচনা সম্ভব। তবে, তার আগে তাঁদের সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে।
দর কষাকষিতে অবশ্য চেষ্টার কমতি করছে না ধর্মঘটে নামা বিমানচালকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান পাইলটস গিল্ড (আইপিজি)। ইতিমধ্যেই তাদের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। তবু আইজিপি সভাপতি জিতেন্দ্র অবধের অবশ্য দাবি, বিমানমন্ত্রী বা এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের কাছে যাই বলুন না কেন, বাস্তব ছবিটা অন্য। হাইকোর্টের নির্দেশের কপি তাঁদের কাছে না পৌঁছনোয়, আদালত অবমাননার প্রশ্নই উঠছে না। যাত্রীস্বার্থের কথা ভেবে তাঁরাও চান ধর্মঘট তুলে নিতে। কিন্তু বিমান মন্ত্রী বা এয়ার ইন্ডিয়ার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মুখে আলোচনার কথা বললেও বাস্তবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। মন্ত্রীর বাড়িতে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন তাঁরা। এই অবস্থায় প্রায় ৫০০ পাইলটের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা ধর্মঘট করছেন। মন্ত্রী আলোচনায় বসলেই নিশ্চয়ই কোনও একটা সমাধানসূত্র মিলবে। সমস্যা সমাধানে তাঁরা ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন অবধ। একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বরখাস্ত পাইলটদের পুনর্বহাল, আইপিজি-র অনুমোদন ফিরিয়ে দেওয়া ও পাইলটদের কর্মজীবনের উন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মিললেই আপাতত ধর্মঘট তুলে নিতে রাজি হয়ে যেতে পারেন ধর্মঘটীরা। |