অভিযোগকারিণীর দেওয়া বিবরণই কার্যত ‘সমর্থন’ করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালতে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তাতে জানানো হয়েছে, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে, পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির ভিতরে গণধর্ষণ হয়েছিল। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় যুবকের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
অভিযোগ শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সাজানো ঘটনা’। পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার বক্তব্য ছিল, এটি ‘সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার’। এর পরে অভিযোগকারিণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা-প্রধান দময়ন্তী সেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “কিছু একটা তো ঘটেছেই। অভিযোগকারিণী চিহ্নিতও করেছেন অভিযুক্তদের।” এর কিছু দিনের মধ্যেই দময়ন্তী সেনকে বদলি করা হয়। অনেকে মনে করেন, সেই বদলির পিছনে রয়েছে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের তদন্তে দময়ন্তীর ‘সক্রিয়তা’। এখন আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলাকে যে গণধর্ষণ করা হয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছে।
চার্জশিটে কী বলেছে পুলিশ? কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় যুবক। তার মধ্যে রুমান খান ওরফে টুসি, নাসের খান এবং সুমিত বাজাজকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত কাদের খান এবং তার অন্য দুই সঙ্গী রাশেদ খান ওরফে আলি ও জনি পলাতক। তাদের খোঁজে ‘লুক আউট নোটিস’ জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, যে গাড়িতে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে ওই মহিলা অভিযোগ করেন, তার ভিতরে কানের দুল পাওয়া যায়। আদালতে সেই দুল জমা দিয়েছে পুলিশ। মহিলার জামাকাপড় এবং ওই গাড়ির ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টও কোর্টে জমা পড়েছে।
খাস কলকাতায় ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে পুলিশি অসহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে তুমুল শোরগোল হয়েছিল। মহিলার অভিযোগ ছিল, মাঝ রাতে গাড়িতে তুলে মুখে বন্দুক গুঁজে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। পুলিশের কাছে ‘সুবিচার’ না পাওয়ার অভিযোগও ওঠে। পার্ক স্ট্রিট থানার কয়েক জন অফিসার তাঁর সঙ্গে অপমানজনক ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ।
ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটে একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা একটি পাঁচতারা হোটেলের পানশালায় এবং পরে ওই হোটেলের নাইটক্লাবে যান। রাত দেড়টা নাগাদ ওই মহিলার বন্ধুরা বাড়ি গেলেও তিনি যাননি। ওই নাইটক্লাবে তাঁর সঙ্গে তিন যুবকের আলাপ হয়। রাত দুটো নাগাদ সেখান থেকে বেরোন তিনি। মহিলার বক্তব্য, ওই যুবকেরা তাঁকে তাদের হন্ডা সিটি গাড়িতে লিফ্ট দেয়। চলন্ত গাড়িতেই কাদের তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনের কাছে তাঁকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে তিনি একটি ট্যাক্সি ধরে নিজের বাড়ি ফিরে যান। |