আরব্য রজনীর গল্পে সেই ছদ্মবেশী সুলতানের মতো জনগণের ‘দুর্দশা’ দেখতে পথে নামলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। এক জন হাতেনাতে ধরে ফেললেন রেশন কার্ডের দালাল-চক্র। আর এক জন বাজার ঘুরে যাচাই করে এলেন মূল্যবৃদ্ধির বহর। দু’টি ঘটনাই বৃহস্পতিবারের। গ্রাহক সেজে নিজেরই দফতরে হানা দিয়ে এ দিন দুই প্রতারককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর জিনিসপত্রের দরদাম সরেজমিন খতিয়ে দেখতে আচমকাই মহানগরের একটি বাজারে হাজির হন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়।
সকালে বনহুগলিতে রেশন অফিস খোলার কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছন খাদ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “নজর এড়াতে নিরাপত্তারক্ষীদের নিইনি। টবিন রোডের কাছে লাল বাতি লাগানো গাড়ি ছেড়ে হেঁটেই রেশন অফিসে যাই। সামনে তিন জন টাকা নিয়ে নতুন কার্ড করাচ্ছিলেন। আমিও করাতে চাইলাম। বলা হল, এক দিনে কার্ড পেতে হাজার টাকা লাগবে।” এর পরেই বেশি টাকা নিয়ে জাল রেশন কার্ড করানোর অভিযোগে হাতেনাতে রামকৃষ্ণ বল, দিলীপ বসু এবং নিখিল চক্রবর্তী নামে ওই তিন জনকে ধরেন তিনি। পরে বরাহনগর থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
সরকারে এসে থেকেই রেশন দফতরে জালিয়াতি নিয়ে সরব খাদ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “রেশন দফতর ঘুঘুর বাসা। এটা আমি ভাঙবই। কিছু দিন ধরেই এই রেশন অফিস ও স্থানীয় কয়েক জন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছিলাম। তাই আচমকা হানা দিই। অফিসে ১২ জন কর্মীর মধ্যে হাজির ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। বাকি কর্মীরা ইচ্ছেমতো ফাঁকি দেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অবশ্য বাজার ঘুরে দেখে সন্তুষ্ট। এ দিন আচমকাই গড়িয়াহাট বাজারে হাজির হয়েছিলেন তিনি। শাকসব্জি ‘অগ্নিমূল্য’, এই অভিযোগ মানতে নারাজ অরূপবাবুর বরং দাবি চাষিরা এ বার মাঠে ন্যায্য দাম পেয়েছেন। ক্রেতারাও গত দু’বছরে এত কম দামে শাকসব্জি কিনতে পারেননি। মন্ত্রীর অভিযোগ, কিছু দিন ধরে শাকসব্জি অগ্নিমূল্য হয়েছে বলে বাজারে একটা গুজব রটানো হচ্ছে। তা ঠিক কি না দেখতেই এই বাজার-সফর।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ ওই বাজারে পৌঁছন কৃষি বিপণন মন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন দফতরের কিছু অফিসার ও পুলিশকর্মী। বাজারে ঢুকেই মন্ত্রী শাকসব্জির দরদাম করতে শুরু করেন। খোঁজ নেন আলু কত দরে বিকোচ্ছে। এ দিন গড়িয়াহাটে আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৩ টাকায়। বেগুন বিকিয়েছে ২০ টাকা ও পেঁয়াজ ১২ টাকায়। মন্ত্রীর দাবি, ২০০৯ সালে এই সময়ে সব ফসলের দাম অনেক বেশি ছিল। আলু ছিল ২২ টাকা। এক মুদি দোকানে সর্ষের তেলের কেজি জিজ্ঞাসা করেন মন্ত্রী। দোকানি বিল দেখিয়ে বলেন, ঘানি থেকে তিনি ৯৮ টাকা দরে সর্ষের তেল কেনেন। বিক্রি করছেন ১০২ টাকায়।
বাজার পরিদর্শনের পরে মন্ত্রী বলেন, “খুচরো বাজারে কী দামে জিনিস বিকোচ্ছে, তাতে নিয়মিত নজরদারি চলছে। মাঝেমধ্যে আমিও বাজারে যাচ্ছি। এর পরে হোলসেল মার্কেট পরিদর্শনে যাব।” মন্ত্রী জানান, এখনও অনেক আলু-বিক্রেতা লাইসেন্স করাননি। তাঁদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। প্রায় আধ ঘণ্টা বাজারে ঘুরে ফের মহাকরণের পথে রওনা হন কৃষি বিপণন মন্ত্রী। |