বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়িয়ে টাকার পতন রুখতে বৃহস্পতিবার বড় রকম পদক্ষেপ করল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। টাকাকে টেনে তুলতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাওয়াই মূলত দু’টি:
• রফতানিকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের ৫০ শতাংশ সরাসরি বাজারে বিক্রি করার নির্দেশ। যার অর্থ, অর্ধেকের বেশি আয় ধরে রাখতে পারবেন না রফতানিকারীরা।
• বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির দৈনিক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমা রাত্রী কালীন তহবিলের পাঁচ গুণ করা। এর আগে সাধারণ ভাবে কোনও ব্যাঙ্ক রাত্রী কালীন তহবিলের সীমা ছাড়িয়ে লেনদেন করতে পারত না। বাজারে আসা বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রার আদান-প্রদান সামলাতেই এই ব্যবস্থা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশের ফল মিলেছে হাতে হাতে। পতন কাটিয়ে ডলারে টাকার দাম বেড়েছে ৪২ পয়সা। বিশেষজ্ঞরা এই হস্তক্ষেপকে আর্থিক সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা বলে সমালোচনা করেছেন। ২০১২-র মার্চ থেকে এ পর্যন্ত টাকা পড়েছে ৮%। মার্চের গোড়ায় ১ ডলারের দাম ছিল ৪৯ টাকা।
বুধবার ডলারের তুলনায় টাকা ৭২ পয়সা পড়ে (১ ডলার=৫৩.৮২/৮৩ টাকা) এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে গেলেও, এ দিন সকালের লেনদেনেই এক ধাক্কায় তা বেড়ে যায় ৯৪ পয়সা। দিনের শেষে অবশ্য ডলারে টাকার দাম বাড়ে ৪২ পয়সা, যার জেরে ১ ডলারের দাম ছুঁয়েছে ৫৩.৪২ টাকা। সেনসেক্স এ দিনও প্রায় ৬০ পয়েন্ট পড়ে দাঁড়ায় ১৬,৪২০ পয়েন্টে। গাড়ি সংস্থার শেয়ার পড়ে যাওয়া, বিশ্ব বাজারে মন্দা এবং তার জেরে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি ফিরিয়ে নেওয়ার জেরেই পরপর তিন দিন পড়ল সূচক।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া নির্দেশ অনুসারে ব্যাঙ্কে রফতানিকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট (এক্সচেঞ্চ আর্নার্স ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট)-এ জমা থাকা ৫০% তহবিল টাকায় রূপান্তর করতে হবে। তার পর তা জমা পড়বে তাঁর টাকার অ্যাকাউন্টে। এত দিন আয়ের ১০০% অ্যাকাউন্টে রাখা যেত।
ইঞ্জিনিয়ারিং রফতানি উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাকেশ শাহ নয়া নির্দেশ নিয়ে এক মন্তব্যে বলেন, “এটা আর্থিক সংস্কার থেকে পিছু হটারই নামান্তর। তবে এতে যদি টাকাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা হলে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব, অচিরেই ১০০% আয় অ্যাকাউন্টে রাখার অনুমতি মিলবে।” রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও প্রেসিডেন্ট এম রফিক আহমেদ জানান, “বাড়তি ডলারকে টাকায় রূপান্তর করতে এখন থেকে ফি খাতে বেশি খরচ হবে। কমতে থাকা রফতানি আয় এর ফলে কার্যত আরও কমবে।”
রফতানি বৃদ্ধি তলানিতে। বিশ্ব-মন্দার জেরে এপ্রিলে ভারতের রফতানি ৩.২% বেড়ে হল ২৪৫০ কোটি ডলার। তবে আমদানি মাত্র ৩.৮% বাড়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩২০ কোটি ডলার। এক বছরে তা সবচেয়ে কম। |