|
|
|
|
মন পাওয়া আর হল না |
আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ৪১ ও ৪২।
সুব্রত সীট |
এক জনের এলাকায় মানুষের মুখে শুধুই নানা সমস্যার কথা। কোনও কিছুরই নাকি সুরাহা হয়নি।
কাউন্সিলর অবশ্য মানতে নারাজ। তাঁর খেদ, “অনেক কাজ করেও সবার মন পাওয়া গেল না।”
অন্য জনের এলাকায় রাস্তা হয়েছে, নর্দমা হয়েছে। মাঠ সংস্কার থেকে কমিউনিটি সেন্টার, স্কুলের ঘরও হয়েছে। কিছু কাজ নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ অবশ্য আছে।
সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে, এ কথা মেনে নিয়েই কাউন্সিলরের আক্ষেপ, “বহু কাজ বাকি থেকে গেল।”
দুর্গাপুর পুরসভার ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরই সিপিএম থেকে নির্বাচিত। ‘কাজ বাকি’ থাকার আক্ষেপ থাকলেও এ বার আর টিকিট পাননি ৪২ নম্বরের কাউন্সিলর দেবাশিস চক্রবর্তী। ৪১ নম্বরের শান্তি মজুমদার অবশ্য ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
জি টি নতুন পল্লি, বিদ্যাসাগর পল্লি, বীরভানপুর গ্রাম, বীরভানপুর শ্মশান, জলবস্তি, মহানন্দা কলোনি, দামোদর কলোনি, ডিভিসি কলোনি, শ্রমিক নগর কলোনি, রেল কলোনি, স্টেশন লাগোয়া বস্তি, সাধুডাঙা, শিমুলতলা বস্তি, সেন মার্কেট ও নন্দন মার্কেট নিয়ে পুরসভার এই ওয়ার্ড। সমস্যার অন্ত নেই। রেল কলোনির বাসিন্দা বলরাম মাঝির কথায়, “পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে জল ঢুকে যায়।” মহানন্দ কলোনির শিবশঙ্কর ভঞ্জ বলেন, “নিকাশি বেহাল। স্টেশনের কাছে কাঁচা নর্দমা সংস্কার হয়নি।” বীরভানপুর গ্রামের কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দামোদরের ক্যানালের উপরে সেতু ভাঙা। কাউন্সিলরের কোনও উদ্যোগ নেই।” ডিভিসি কলোনির বাসিন্দা শ্যামল সাউ আবার বলেন, “সংসারে অভাব রয়েছে। অথচ অনেক সম্পন্ন পরিবার ভাতা পেলেও আমরা পাইনি।” পুরসভার কাজ নিয়ে একই রকম সব অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিপুল সাহার গলাতেও। তাঁর আরও অভিযোগ, সরকারি ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ হয়েছে। |
|
|
৪১ নম্বরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই বাস। |
৪২ নম্বরে রাস্তা থেকে বেরিয়ে পড়েছে ইট। |
|
শান্তিদেবী অবশ্য বলেন, “দলমত নির্বিশেষে নায্য প্রাপকেরাই ভাতা পেয়েছেন।” তিনি আরও জানান, শ্রমিকনগর, স্টেশন চত্বর, বীরভানপুর, দামোদর কলোনি থেকে মহানন্দা কলোনি ইত্যাদি এলাকায় রাস্তা গড়া হয়েছে। বীরভানপুর থেকে ছিন্নমস্তা মন্দির পর্যন্ত পিচ রাস্তা ও পাকা নর্দমা হয়েছে। শ্মশানে বিশ্রামাগার, ছাউনি হয়েছে। শ্মশানের কাছে ডিভিসি ক্যানালে কাঠের সেতুও হয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পে ৪২টি বাড়ি, ৫টি কমিউনিটি শৌচাগার ইত্যাদিও হয়েছে। কাউন্সিলরের খেদ, “জঞ্জাল সাফাই, নর্দমা পরিষ্কারের কাজ চলছে। মহিলাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সব সত্ত্বেও মানুষ শুধুই অভিযোগ তোলেন।”
উন্নয়নের লম্বা ফিরিস্তি দিলেন ৪২ নম্বরের কাউন্সিলর, ডিপিএলের কর্মী দেবাশিসবাবু। শ্যামপুর কলোনি, সুকুমারনগর কলোনি, ব্যারাজ সাইড কলোনি, সূর্য সেন পল্লি, আবাসন পল্লি, নেতাজি সুভাষ পল্লি, প্রগতি পল্লি, রবীন্দ্রপল্লি বি ব্লক, পূর্বাচল নিয়ে এই ওয়ার্ড। কাউন্সিলরের দাবি, ওয়ার্ডে ৫ কিলোমিটার কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। পিচ রাস্তা হয়েছে ৩ কিলোমিটার। পাকা নর্দমা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার। তিনি আরও জানান, রবীন্দ্রপল্লিতে শিশু উদ্যান হয়েছে, শ্যামপুরে সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও ফুটবল মাঠ সংস্কার, তিনটি ক্লাবে কমিউনিটি সেন্টার, শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কার হয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পে ১২০টি বাড়িও হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, “সুকুমারনগর কলোনিতে জলাধার গড়া হচ্ছে। বস্তিতে ৩টি কমিউনিটি শৌচাগার হয়েছে। তবে আরও ৪টি দরকার।”
এলাকার বিরোধী নেতা তৃণমূলের গোবিন্দ দাসের অবশ্য দাবি, “সুভাষপল্লিতে পানীয় জলের সমস্যা আছে। নর্দমা পরিকল্পনা মাফিক না হওয়ায় জল জমে যায়। সংস্কারের অভাবে এলাকার দু’টি পুকুর মজে গিয়েছে। কীটনাশক স্প্রে না করায় মশার উপদ্রব রয়েছে। কাউন্সিলরের কোনও নজর নেই।” এলাকার যুব তৃণমূল নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রগতিপল্লি থেকে রবীন্দ্রপল্লি হয়ে সুকুমারনগর পর্যন্ত নর্দমা তৈরির কাজ শুরু হয়েও থমকে গিয়েছে।” সুভাষপল্লির বাপন অধিকারী, প্রগতিপল্লির বলাই মণ্ডলদের আবার অভিযোগ, “সরকারি চাকুরে হয়েও অনেকে বিএসইউপি-র বাড়ি পেয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম হয়েছে।” স্বজনপোষণের অভিযোগ অবশ্য দেবাশিসবাবু মানতে চাননি।
সামনের বার আর কাউন্সিলর থাকার সুযোগ নেই। বিড়বিড় করে তিনি শুধু বলছেন, “বহু কাজ বাকি থেকে গেল।” |
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ৪১ |
ওয়ার্ড ৪২ |
• বেহাল নিকাশি
• রাস্তা সংস্কার করা হয় না
• পানীয় জলের সঙ্কট |
• নিকাশি বেহাল
• কীটনাশক স্প্রে না করায় মশার উপদ্রব
• পানীয় জলের সঙ্কট |
পাঁচ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ হয়েছে।
শান্তি মজুমদার, সিপিএম কাউন্সিলর |
সামান্য ত্রুটি থাকতে পারে। তবে কাজ হয়েছে।
দেবাশিস চক্রবর্তী, সিপিএম কাউন্সিলর |
কাউন্সিলরের মদতেই নানা রকম অনিয়ম হয়েছে।
শিপুল সাহা, তৃণমূল নেতা |
এলাকা সমস্যার অন্ত নেই। কাউন্সিলর নজরই দেন না।
গোবিন্দ দাস, তৃণমূল নেতা |
|
ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
|
|
|
|
|