|
|
|
|
সিপিএম নেতার ছেলে খুন, রাজনীতি দেখছে না কেউই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বার্নপুর |
ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে আততায়ীর গুলিতে খুন হলেন হিরাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে। যদিও এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণ নেই বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। খুনের প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ১২ ঘণ্টা বার্নপুর বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম।
|
অর্পণ মুখোপাধ্যায় |
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বার্নপুরে ইস্কোর ফুটবল স্টেডিয়ামের কাছে এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র বামাপদবাবুর ছেলে অর্পণ মুখোপাধ্যায় (৫১) প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎই মোটরবাইকে জনা কয়েক দুষ্কৃতী এসে খুব কাছ থেকে পরপর কয়েকটি গুলি করে। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন অর্পণবাবু। পুলিশ এসে ইস্কো হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়।
আসানসোলের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এটি রাজনৈতিক খুন বলে মনে হচ্ছে না। তবে আমরা সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত করছি। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি কার্তুজের
খোল উদ্ধার হয়েছে।” সিপিএমের বার্নপুর শহর শাখা কমিটির সদস্য ছিলেন অর্পণবাবু। তবে পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত কারণে বা ব্যবসায়িক রেষারেষি থেকে এই খুন হয়ে থাকতে পারে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পুলিশ জেনেছে, অর্পণবাবু মূলত ইস্কো কারখানায় নির্মাণসামগ্রীর ঠিকাদারি করতেন। ইদানীং প্রোমোটারি ব্যবসার সঙ্গেও কিছুটা জড়িয়েছিলেন। আরও কিছু ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল তাঁর। |
|
ছেলে অর্পণের দেহ জড়িয়ে কান্না হিরাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক
তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের। |
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারও একে ‘রাজনৈতিক খুন’ বলে দাবি করেননি। বরং অর্পণবাবুদের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার দাবি করছি।” পুলিশ এক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সকালে খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বহু সিপিএমের কর্মী-সমর্থক ঘটনাস্থলে চলে আসেন। আসায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। বার্নপুর শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দোকান-বাজার বন্ধ হয়ে যায়। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে কয়েকশো সিপিএম সমর্থক হিরাপুর থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। শহরের বাস চলাচলও কয়েক ঘন্টা বন্ধ থাকে। বেলার দিকে বাস চলতে শুরু করলেও দোকানপাট আর খোলেনি। থানার সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধের ডাক দিয়ে সিপিএমের হিরাপুর জোনাল সম্পাদক অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এখনও একে রাজনৈতিক খুন বলছি না। পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বের করুক।”
রাজনীতি করলেও এলাকায় ‘নির্বিরোধী’ মানুষ বলেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন অর্পণবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছেও কোনও অভিযোগ ছিল না। এক সময়ের দাপুটে নেতা, অশীতিপর বামাপদবাবু হাসপাতালে গিয়ে ছেলের মৃতদেহের সামনে কার্যত ভেঙে পড়েন। পরে সামান্য ধাতস্থ যয়ে তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ থাকায় অর্পণবাবু রোজ সকালে স্টেডিয়ামের কাছে হাঁটতে যেতেন। দুষ্কৃতীরা বেশ কিছু দিন ধরে মহড়া দিয়েই এই খুন করেছে বলে তাঁর ধারণা।
শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতা, আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারিও দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারের দাবি জানান। হাসপাতালে গিয়ে অর্পণবাবুর পরিজনদের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেছেন। |
ছবি: শৈলেন সরকার |
|
|
|
|
|