একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণের মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, চোপড়ার কংগ্রেস নেতার ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার ভোরে চোপড়া থানার দাসপাড়া এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়। ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হলে তাকে ৮ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেছেন বিচারক। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চোপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। তার বাবা নাসিরুদ্দিনবাবু চোপড়ার মাঝিয়ালির অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি। জাইদুল ধরা পড়লেও অভিযুক্ত আরও ৬ জন ফেরার থাকায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ধৃতের পরিবারের হয়ে ছাত্রীটির বাড়ির লোককে অভিযোগ না-তুললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নাসিরুদ্দিনবাবু দাবি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কিশোরীর দাদা মেহেবুব আলম জানান, ওই কংগ্রেস নেতা ও তাঁর ভাইয়েরা প্রাণে মেরে ফেলবে বলে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনার খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরীকে দেখতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। কিশোরীর মাথায় হাত বুলিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে সান্ত্বনা দেন কিশোরীর পরিবারকে। পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কিশোরীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নিয়েছেন। তিনি চিন্তিত। তাঁকে বিস্তারিত জানাব। এই বর্বরোচিত, নৃশংস ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। যেখানেই তারা থাকুক সকলকে গ্রেফতার করতে হবে। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি হবে।” ঘটনায় কংগ্রেস নেতার ছেলে যুক্ত থাকা এবং ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কোনও পতাকা, রং দেখা হবে না। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলছি। যারাই যুক্ত থাকুক শাস্তি হবে।” দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের সদস্যা ওই কিশোরীর চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিশোরীর বুক, পেট-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এখনও ব্যথা রয়েছে। তার প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবারের লোকদের অভিযোগ, ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ডাক্তারি পরীক্ষা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে দেরি করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় কিশোরীর স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পরিচালন সমিতির বৈঠকের পরে অভিভাবকদের নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত ধরার দাবি তোলেন তাঁরা। সে সময় থানার ভিতরেই কিশোরীর এক আত্মীয়ের কাছে ‘এ সব করলে ফল ভাল হবে না’ বলে হুমকি দিয়ে ফোন আসে। ক্ষুব্ধ শিক্ষিকা, অভিভাবকেরা থানার আধিকারিক, বিডিও অফিসের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ব্যাপারে ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে. ধৃত ওই যুবককে জেরা হচ্ছে।” পাশাপাশি, অভিযুক্তরা হুমকি দিচ্ছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়েও পুলিশ পৃথক তদন্তে নেমেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওই কংগ্রেস নেতার ছেলে ও তার ৭ সঙ্গী কিশোরীকে স্কুলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। গত শনিবারের ঘটনা। তার পরে কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে গলায় পা দিয়ে খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কিশোরীটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে দুষ্কৃতীরা হাইড্রেনে ফেলে চলে যায়। জ্ঞান ফিরলে কিশোরী চা বাগানের নাইলনের জাল গায়ে দিয়ে ছুটতে থাকে। তখন বাগানের মহিলা শ্রমিকেরা উদ্ধার করে বাড়িতে খবর দেন। পুলিশ জেনেছে, ওই সময়ে শ্রমিকরা দুজন বাইক আরোহীকে পালাতে দেখে তাড়া করে। এক জন বাইক ফেলে পালায়। সেটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। ঘটনাস্থলে কাছ থেকেই কিশোরীর ছিন্নভিন্ন জামাকাপড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ দিকে, চোপড়ার ব্লক সভাপতি অশোক রায় বলেন, “ঘটনাটি নিন্দাজনক। ওই কংগ্রেস নেতার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা-ও খতিয়ে দেখা হোক। তবে সে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে।” |