মাত্র আধ ঘণ্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ডুয়ার্স ও কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হল। সোমবার বিকালে নাগাদ ওই ঝড় হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে গাছ পড়ে গিয়ে এবং বজ্রপাতে প্রায় ২৫ জন জখম হয়েছেন। জখমদের মধ্যে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঝড়ে চাল উড়ে গিয়েছে কয়েক হাজার বাড়ির। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে মালবাজার, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও তুফানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তুফানগঞ্জের অন্দরান ফুলবাড়িতে গাছ চাপা পড়া পাঁচ জনকে উদ্ধার করতে করতে দমকল কর্মীদের ডাকতে হয়েছে। গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছু গবাদি পশুর। তুফানগঞ্জেই ঝড়ে গাছ পড়ে তৃণমূল ও বিজেপি’র দুটি কার্যালয় ভেঙে পড়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং গাজলডোবা এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিও। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ঝড়ে ওই দুই মহকুমায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তুফানগঞ্জে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। পাঁচশোর বেশি বাড়ি ভেঙেছে বলে প্রাথমিক ভাবে খবর এসেছে।” |
খবর পেয়েই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “ভয়াবহ অবস্থা। পাচ হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছ উপড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। দ্রুত ত্রাণের ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।” মালবাজারের মহকুমাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ত্রাণের জন্য প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ মালবাজার মহকুমা জুড়ে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। তার মধ্যে নাগরাকাটা ব্লকের শুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে শতাধিক টিনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জখম হন ৯ জন। তার মধ্যে একজন বজ্রপাতে জখম হন। তাঁকে মালবাজার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঝাড়টণ্ডু, সুখানি বস্তি-সহ লাগোয়া এলাকা। নাগরাকাটার বিডিও নবীন লামা এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল, চাল দেওয়াও শুরু করেছেন। বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় মাত্র পনের মিনিট স্থায়ী ঝড়ে প্রচুর ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। উপড়ে যায় অসংখ্য গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। জখম হন অন্ততঃ ১৬ জন। ঝড়ের জেরে তল্লিগুড়ি এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তুফানগঞ্জের বিডিও অফিস লাগোয়া মেন রোড, কালীবাড়ি এলাকাতেও রাস্তার ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের সময় গাছ চাপা পড়ে কোচবিহারের জামাইবাজার এলাকায় ৫ জন জখম হন। দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ চাপা পড়ে যাওয়া দোকানে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। |
তুফানগঞ্জের উত্তর অন্দরাণ ফুলবাড়িতে গাছ চাপা পড়ে জখম ক্ষিতীশ শীলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কোচবিহারের বাণেশ্বর, দেওয়ানহাট, জিরানপুর আর পানিশালা এলাকায় ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে গিয়ে ১০ জন জখম হন। বক্সিরহাট, বারকোদালি, অন্দরান ফুলবাড়ি, ধলপল, নাককাটি গছে বহু বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। ডাঊয়াগুড়ির কাছে খাসপাড়া এলাকায় প্রচুর বাড়ির টিনের চাল উড়ে গাছে আটকে যায়। আলিপুর দুয়ারে ঝড় শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। আধ ঘণ্টার ঝড়বৃষ্টিতে সোনারপুরে কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীরপাড়ায় গাছ পড়ে বাড়ি ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালচিনির বিডিও থেন্ডুপ শেরপা জানান, নিমতিঝোরা জুনিয়র স্কুলের চাল ও চা বাগান এলাকায় বেশ কয়েকটি শ্রমিক আবাসনের চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, শহরের ৮, ৯, ১০, ১১, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে।
|
ফালাকাটা ও তুফানগঞ্জের ছবি রাজকুমার মোদক ও হিমাংশুরঞ্জন দেব |