‘জোরাজুরি’ কম করেনি বাড়ির লোক। কিন্তু দিনভর লুকিয়ে থেকে নিজের বিয়ে ভেস্তে দিল কোচবিহারের ডাউয়াগুড়ির নাবালিকা সীমা সরকার।
খাপাইডাঙা জয়কান্ত হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সীমা বলছে, “পড়তে চাই। জোর করে বিয়ে দেওয়া ঠেকাতে পারছিলাম না বলেই পালিয়েছিলাম। সরকার সাহায্য করলে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব।” বিয়েতে বাধ্য হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে বছর পনেরোর সীমা। আপাতত রয়েছে প্রশাসনের আশ্রয়ে।
কোচবিহার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সীমার পড়াশোনা শেষ করার ক্ষেত্রে তারা সব রকম সাহায্য করবে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার খবর পেয়ে বিডিও-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” বিডিও (কোচবিহার ১ ব্লক) সঙ্গীতা তলাপাত্র বলেন, “মেয়েটি বাড়িতে কোনও ভাবেই থাকতে রাজি হয়নি। ফের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে আতঙ্ক কাটাতেই ওকে হোমে রাখা হয়েছে।”
|
সীমা সরকার |
সীমারা তিন ভাইবোন। মা মঞ্জরী সরকার স্বামী-বিচ্ছিন্না। তিনি ও তাঁর বৃদ্ধা মা ঊষাদেবী দিনমজুরি করে সংসার চালান। সীমার বড় বোনকেও নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে মাস ছয়েক আগে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার সীমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল খাপাইডাঙা গ্রামের এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে। রবিবার ছিল বিয়ে। কিন্তু পাত্রপক্ষ বাড়িতে এসে দেখে, পাত্রী নিখোঁজ! রাতে পাত্রপক্ষের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তবেই ফেরে সীমা। ফিরে অবশ্য জুটেছে ‘গঞ্জনা’। বইখাতা পোড়ানোর পাশাপাশি তাকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ।
নারী আন্দোলনের কর্মী সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় যে, এই সব ঘটনা সংবাদমাধ্যম ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরায় আরও মেয়েরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সাহস পাচ্ছে। আবার হয়তো কোথাও, আরও প্রত্যন্ত জায়গায় এই ধরনের প্রতিবাদগুলো লোকমুখে মেয়েদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তাতেও তাদের সাহস বাড়ছে।”
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরেও প্রশাসনিক তৎপরতায় ঠেকানো গিয়েছে এক নাবালিকার বিয়ে। বাবুগ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর বিশ্বনাথ সহিস তাঁর তেরো বছরের মেয়ে ঊর্মিলার বিয়ে ঠিক করেন ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারির এক যুবকের সঙ্গে। ৫ মে বিয়ে। জানতে পেরে বিডিও আবরার আলম এবং ব্লক সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামে গিয়ে ওই পরিবারকে বোঝালেও তারা শোনেনি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তখন পুলিশকে জানায়। নাবালিকার বিয়ে দিলে মেয়ের বাবা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পুলিশ এই কড়া বার্তা দিতেই বিয়ে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় দিনমজুর পরিবারটি।
|
(সহ প্রতিবেদন: শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল) |