কেউ হোটেলে কাজ করে। কেউ কারখানায়। আবার কেউ দিনভর রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা ঘেঁটে জোগাড় করা জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা রোজগার করে। শিলিগুড়ি শহরের ইতিউতি চোখ রাখলেই দেখা মেলে ওঁদের। সে সব শিশু শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সোমবার এনজেপি স্টেশনের পাশে শিশু শ্রমিকদের নিয়ে এক সংস্থার অনুষ্ঠানে এ কথা জানান এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। শীঘ্রই সমীক্ষায় নেমে শিশুশ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করবে এসজেডিএ। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “শিলিগুড়িতে প্রচুর শিশু শ্রমিক রয়েছে। তাদের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সমীক্ষার কাজে নামা হবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা শিশু শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে তাদের সাহায্য নেওয়া হবে। তারা কী ধরণের কাজ করছে সেটা জানা হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব। এসজেডিএ’র তরফে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্ত দিকে যাতে উন্নতি করা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। এটা একটা দীর্ঘ সময়ের কাজ হবে।” প্রয়োজনে একটি হোম তৈরির বিষয়ও মাথায় আছে বলে জানান এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান। এ দিন শতাধিক শিশু শ্রমিককে ওই অনুষ্ঠানে হাজির করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে পাশে পেয়ে শিশুদের এনেকই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মৃণাল ঘোষ বলেন, “আমরা শিশু শ্রমিকদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে বেশ কিছু শিশুকে আমরা আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তাদের ‘স্টাইপেন্ড’-এর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কেউ স্কুলে না আসলে আমরা তাঁর বাড়ি চলে যাই। আমরা চাই এসজেডিএ এগিয়ে আসুক। সবাই মিলে কাজ করলে শিশু শ্রম বন্ধ করা যাবে।” শিলিগুড়িতে বহু খাওয়ার হোটেল, রেস্তোরা, ছোট চায়ের দোকান, নানা খাবারের দোকান এমনকী বেশ কয়েকটি বড় হোটেলেও শিশু শ্রমিকদের দেখা যায়। বেশ কিছু কারখানাতেও শিশু শ্রমিক দেখা যায়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ধারণা, শিলিগুড়িতে এক হাজারের উপরে শিশু শ্রমিক রয়েছে। এদের প্রত্যেকেই দরিদ্র পরিবারের। অনেকের বাবা-মা বাইরে কাজের জন্য চলে গিয়েছেন। আবার অনেকের বাবা-মা দিনমজুর। বাধ্য হয়ে তাঁরা শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত হয়। সম্প্রতি দুই শিশু শ্রমিককে নিজেদের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছি। ওই দুই শিশু মহরম আলি, বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, “খুব ভাল আছি। পড়াশোনা শিখছি। ভাল লাগছে।” এ দিন শিশুদের ফুটবল, ক্যারামবোর্ড সহ বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম তুলে দেন রুদ্রবাবু।
|