আশার মেঘের আড়ালে অশনি সঙ্কেতও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত এখন গলায় গলায়। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবং তাতে দুঃসহ গুমোট কাটার আশা থাকলেও মাথা চাড়া দিয়েছে অন্য বিপদের আশঙ্কা। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস: যে ভাবে দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘ তৈরির এ হেন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বজ্রপাতের সম্ভাবনা যথেষ্ট।
দুপুরের পরে আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখলে মানুষকে তাই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রবিবারই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন ৯ জন। বস্তুত যেখানেই কালবৈশাখীর ঝড় হচ্ছে, সেখানেই বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এর কারণ কী?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা: দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম বাতাস উপরে উঠতে থাকে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে তাও উপরে উঠে যায়। যত বেশি জলীয় বাষ্প ঢোকে, উল্লম্ব মেঘের দৈর্ঘ্য তত বাড়ে। ওই মেঘের ভিতরে বাতাসের গতিবেগ নির্দিষ্ট তড়িতাধান তৈরি করে উপরের স্তরে ধনাত্মক, মধ্য ও নিচু স্তরে ঋণাত্মক তড়িতাধান। দুই বিপরীত তড়িতাধানযুক্ত স্তরের ব্যবধান খুব বেড়ে গেলে প্রাকৃতিক নিয়মেই স্থিতাবস্থা আনতে তড়িতাধানের আদান-প্রদান হয়। তাতেই হয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন। অর্থাৎ বজ্রপাত। |
|
আবহবিদেরা জানিয়েছেন, মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জেরে বায়ুর তাপমাত্রা ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। প্রবল তাপে মেঘের মধ্যে থাকা বায়ুর বিভিন্ন ধরনের গ্যাসও প্রসারিত হয়। সেই গ্যাসের কম্পনই মেঘ গর্জনের কারণ। “বজ্রপাত থেকে মেঘ গর্জন পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। তার অনেক রহস্য এখনও ভেদ করা যায়নি।” মন্তব্য এক আবহবিদের।
এ দিকে নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় থাকায় দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে এখন বাড়তি জলীয় বাষ্প ঢুকছে। তাই উল্লম্ব মেঘের দৈর্ঘ্য বাড়ার সম্ভাবনা। এতে বজ্রপাতের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। সোমবার তিনি বলেন, “নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় থাকা পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি
থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে ঘন ঘন বজ্রপাতের আশঙ্কা।” |
বাজ থেকে বাঁচতে |
• চৈত্র-বৈশাখে দুপুরের পরে ঘন মেঘ দেখলে হুঁশিয়ার
• গুরু গুরু শব্দ শুনলে পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিন
• গাড়ির ভিতরেও আশ্রয় নিতে পারেন
• গাছের তলায় থাকবেন না
• বৈদ্যুতিন সরঞ্জামে হাত দেবেন না
• জলের কল খুলবেন না, জলে হাত দেবেন না |
জেনে রাখুন |
• শব্দের চেয়ে আলোর গতিবেগ বেশি
• শব্দ যখন হয়, তার আগেই বাজ মাটিতে আসে
• সোজাসুজি গায়ে এসে পড়লে মৃত্যু অনিবার্য
• বজ্রাঘাতে আহত কাউকে তৎক্ষণাৎ ছুঁলেও বিপদ
• অন্য কিছুতে ধাক্কা খেয়ে ঠিকরে আসতে পারে বাজ
• মাটিতে দাঁড়ানো ব্যক্তিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন |
|
|