|
|
|
|
মমতার নির্দেশ |
বাম-মোড়কে মে দিবস পালন করবে তৃণমূলও |
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পথে ‘বাম-অস্ত্রে’ বামেদের মোকাবিলা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার এক বছর পর শ্রমিক ফ্রন্টে সিটুকে ‘টেক্কা’ দিতেও সেই বাম-মোড়কই তাঁর হাতিয়ার। মমতার নির্দেশেই মঙ্গলবার মে দিবসকে ‘আন্দোলনের দিন’ বলে পালন করছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি।
কাজের সময় আট ঘণ্টায় বেঁধে দেওয়ার দাবিতে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার হে মার্কেটে আন্দোলন করায় জর্জ এঙ্গেল-সহ পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। মে-দিবসের সেই পাঁচ ‘শহিদ’-এর ছবি দেওয়া ব্যাজ, পোস্টার শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া
হচ্ছে। ‘সরকার-ঘনিষ্ঠ’ চ্যানেলে
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানও গাইবেন সংগঠনের নেত্রী।
এত দিন সিটু-সহ বামপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নগুলির উদ্যোগে এই কায়দায় মে-দিবস পালন করা হত। ‘পরিবর্তন’-এর পর তা ‘হাইজ্যাক’ করতে তৎপর আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের কথায়, “নেত্রী আমাদের বলেছেন, বাম সরকারের আমলে বন্ধ যেমন একটা ছুটির দিনে পরিণত হয়েছিল, তেমনই মে-দিবসও একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এ বার এ দিনটির তাৎপর্য শ্রমিকদের কাছে তুলে ধরতে হবে।” কী ভাবে? দোলার ব্যাখ্যা, “নিজেদের টাকা-পয়সার হিসাবের বাইরে গিয়ে কারখানা চালু রাখার ব্যাপারে শ্রমিকদের উদ্যোগী হতে হবে। এটাই মে-দিবসের বার্তা।” |
|
তার সবচেয়ে প্রাণবন্ত উদাহরণ তো হতে পারত কল-কারখানায় কাজ-করা। অন্তত ‘প্রতীকী’ হলেও। দোলার বক্তব্য, “কারখানায় কাজ হবে কী করে! এটা তো জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে ঘোষিত।”
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আইএনটিটিইউসি ধর্মতলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে মে-দিবস উদযাপন করবে। থাকবেন মন্ত্রী তথা শ্রমিক নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। মমতার নির্দেশে ১২ তারিখ পর্যন্ত মে-দিবসকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার বিকেলে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল। মিছিলের পরে ধর্মতলায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ। সেখানে সুব্রতবাবু, পূর্ণেন্দুবাবুর মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা বক্তৃতা করবেন। মেট্রো চ্যানেলে হবে সপ্তাহ ব্যাপী পোস্টার প্রদর্শনী। সমস্ত কর্মসূচিতে শ্রমিকের ‘মর্যাদা ও অধিকার’ রক্ষার দাবির পাশাপাশি রাজ্যে ‘শান্তিরক্ষা এবং উন্নয়ন’ অব্যাহত রাখার স্লোগান তোলা হবে।
তৃণমূলের একাংশের মতে, মে-দিবসের কর্মসূচিকে সামনে রেখে মমতা নিজের ‘শিল্পমুখী’ ভাবমূর্তিও তুলে ধরতে চাইছেন। কারখানার গেট অবরোধ করে বা উৎপাদন বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে না বলে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনই ঘোষণা করেছিলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথম মে-দিবস পালনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের কাছে তাঁর বার্তা শিল্প না-বাঁচলে তাঁদেরও রুজি-রোজগার বন্ধ হবে। রাজ্যে গত ৩৪ বছরে ৫৬ হাজার কারখানা বন্ধ হয়েছে। রুগ্ন হয়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজার শিল্পসংস্থা। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট
বা আন্দোলনে কারখানার দরজা বন্ধ হোক, তা মুখ্যমন্ত্রী চান না। ফলে মে-দিবসে আইএনটিটিইউসি-র স্লোগান ‘শিল্প বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও।’ তেমনই বিনিয়োগকারীদের কাছেও রাজ্যের শিল্পের পরিবেশ সম্পর্কে কোনও ‘নেতিবাচক’ বার্তা দিতে চান না মমতা। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাজ্যে যে আক্ষরিক অর্থেই পরিবর্তন হয়েছে, বাম আমলের মতো সরকারি মদতে যে এখানে বন্ধ হয় না, এটা আমরা তুলে ধরার কাজ শুরু করেছি। বাকিটাও করে বিশ্বাস অর্জনের প্রয়াস শুরু করতে হবে। মে-দিবসের চেয়ে ভাল মঞ্চ আর কী হতে পারে?” |
|
|
|
|
|