|
|
|
|
কঙ্কাল কাণ্ড নিয়ে সরব তৃণমূল, হইচই সংসদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের কঙ্কাল কাণ্ড প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ রাজ্যের বিষয়কে কার্যত জাতীয় ক্ষেত্রে এনে ফেলল তৃণমূল। এই নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা বক্তব্য রাখতে গেলে বামেরা বারে বারে বাধাও দেন।
তৃণমূলের প্রশ্ন ছিল, বাম জমানায় পোঁতা একের পর এক কঙ্কাল যে এখন মাটি খুঁড়ে তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এত দিন চুপ ছিল কেন? সেই সময় কমিশনের ভূমিকা কী ছিল, সংসদকে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও। এখানেই না থেমে তৃণমূল নেতারা আজ জানিয়েছেন, বাদল অধিবেশনের সময় রাজধানীতে পশ্চিমবঙ্গের ‘গণহত্যার’ ছবি নিয়ে প্রদর্শনীও করা হবে।
আজ কঙ্কালের বিরাট বড় ছবি নিয়ে সংসদে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যসভায় সেটি দেখানো নিয়ে প্রবল হল্লা হয়। তবে তারই ফাঁকে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ অস্কার ফার্নান্ডেজ ছবিটি চেয়ে নেন তৃণমূলের কাছ থেকে। কংগ্রেসেরও কত কর্মী খুন হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে চান বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কেন্দ্রীয় স্তরে অস্কার বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখালেও তৃণমূলের এই উদ্যোগের কার্যত সমালোচনাই করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং সিপিএম। বামেদের বক্তব্য, রাজ্যের বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করা মানে কেন্দ্রকে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে বলা। অন্য দিকে, রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রশ্ন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তৃণমূল সরকারের অধীনে। তারা কি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জবাবদিহি চাওয়ার আগে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে গিয়েছিল? রাজ্যে অতীতে কী ঘটেছে, তার তদন্ত করবে রাজ্য সরকার নিজেই। সব ব্যাপারে রাজ্যের অধিকার নিয়ে সরব হওয়া তৃণমূল এখন হঠাৎ জাতীয় কমিশনের ঘাড়ে দায় ঠেলছে কেন?
আজ রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বের পর বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূল সাংসদরা। সাধারণ ভাবে সংসদ অধিবেশনে রাজ্যের প্রসঙ্গ তোলা বা তা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। কিন্তু দলীয় সূত্রের বক্তব্য, মানবাধিকার কমিশনের প্রসঙ্গটিকে সামনে এনে সুকৌশলে বিষয়টিকে তুলেছেন তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে দিনের পর দিন গণহত্যা হয়েছে। এখন সেই সব কঙ্কাল বেরোচ্ছে। কিন্তু কত বার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছে? শুধু এখানেই না থেমে তৃণমূলের দাবি, ২০১০ এবং ২০১১ এই দুই বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জঙ্গলমহলের পরিস্থিতির যদি তুলনামূলক পরিসংখ্যান বিচার করা যায়, তা হলে দেখা যাবে, মমতা আসার পর পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০-এ জঙ্গলমহলে হিংসার ঘটনা ছিল ২০৩টি। ২০১১-তে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩২-এ।
পরে সিপিএমের এক সাংসদ এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাম জমানায় তো বাম কর্মীরাই বেশি খুন হয়েছেন। আর ওঁরা (তৃণমূল) যে দাবি করেন, বিগত জমানায় ওঁদের ৫০ হাজার কর্মী খুন হয়েছেন, তার কোনও হিসেব কিন্তু ওঁদের কাছে নেই।”
পশ্চিমবঙ্গের ‘বেহাল অর্থনীতি’ নিয়ে কেন্দ্রীয় সহযোগিতার দাবিটিও বজায় রেখেছে তৃণমূল। আগামী ৪ তারিখ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন নয়াদিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি।
তার আগে তৃণমূল নেতাদের কাছে তাঁর নির্দেশ, কেন্দ্রের উপর ধারাবাহিকভাবে চাপ বজায় রাখতে হবে। আজ রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এ বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী নমোনারায়ণ মিনাকে। গত ২৪ তারিখ সুখেন্দুবাবুর প্রশ্নের উত্তরে যে লিখিত জবাব দিয়েছিলেন মিনা, তাতে আজ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। আজকের চিঠিতে সুখেন্দুবাবু লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে পুরনো সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কত ধার নতুন সরকারকে বইতে হচ্ছে, এটাই তাঁর প্রশ্ন ছিল।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কার্যত বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ২০১১-র মার্চ পর্যন্ত ধারের খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|