প্রকাশ্যে মুখ খুললেন অশোক এবং রেজ্জাক
ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমে কি দলীয় ‘শৃঙ্খলা’র নিগড় ভাঙার চেষ্টা শুরু হল? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান না-পেয়ে উত্তরবঙ্গের অন্যতম নেতা অশোক ভট্টাচার্য এবং সংখ্যালঘু তথা কৃষক নেতা রেজ্জাক মোল্লা প্রকারান্তরে হলেও যে ভাবে প্রকাশ্যে সোমবার তাঁদের ‘ক্ষোভে’র কথা বলেছেন, তাতে ‘স্তালিনীয় শিকল’ ভাঙার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে দলের একাংশ।
অশোকবাবু বলেছেন, “আমাদের পার্টিতে যোগ্যতম নেতৃত্ব যোগ্যতম ব্যক্তিকেই সম্পাদকমণ্ডলীতে বেছে নেন। নিশ্চয়ই সুজন চক্রবর্তী, অমিয় পাত্র আমার থেকে অনেক যোগ্যতর। তাই তাঁদের সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশিই তাঁর মন্তব্য, “লোকে বলছে, উত্তরবঙ্গের একজন প্রতিনিধি থাকলে ভাল হত। তবে নেতৃত্ব যা ঠিক মনে করছেন, সেটাই করেছেন। এতেই পার্টির ভাল হবে।”
আর রেজ্জাক আগামী দিনে রাজ্য কমিটিকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ! তাঁর কথায়, “এখন থেকে শরীর ভাল থাকলে তবেই রাজ্য কমিটির বৈঠকে যাব। নেতাদের কথায় শুধু হাত তোলার জন্য ওখানে যাওয়ার মানে হয় না।” আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতাদের ‘অনুগত’ না হলে যে সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান পাওয়া সম্ভব নয়, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন রেজ্জাক। বলেছেন, “কোনও নেতার প্রতি আমার আনুগত্য নেই। থাকলে হয়তো আমায় সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হত! কিন্তু আমার আনুগত্য পার্টি এবং গরিব মানুষের প্রতি।”
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান না পেয়ে অশোকবাবু অবশ্য ‘হতাশ’ নন বলেই দাবি করেছেন। বলেছেন, “রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে কখনও উৎসুক ছিলাম না। আমরা উত্তরবঙ্গের লোক। কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকি! ফলে হতাশ হওয়ার কারণ নেই।”
আর রেজ্জাক শনি ও রবিবার দু’দিনই ‘অসুস্থতা’র কারণ দেখিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠক এড়ান। ওই দু’দিন তিনি ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। সোমবার কিন্তু তিনি বিধানসভার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় আসেন। এক ঘণ্টার বেশি বৈঠকে থেকে নানা পরামর্শও দেন।
মুখ খুলেছেন রাজ্য কমিটি থেকে বাদ-পড়া প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দীও। এ দিন তিনি বলেন, “কী কারণে আমি বাদ, আজ পর্যন্ত রাজ্য কমিটির নেতারা তা জানাতে পারলেন না!” তাঁর আরও অভিযোগ, দলীয় নেতৃত্বের একাংশ তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে জনসমক্ষে ‘হেয়’ করতে চাইছেন। তাই সংবাদমাধ্যমে তাঁর সঙ্গে লক্ষ্মণ শেঠ ও অনিল বসুকে এক গোত্রে ফেলা হলেও নেতৃত্বের তরফে কোনও প্রতিবাদ করা হচ্ছে না। উত্তর ২৪ পরগনার এই অন্যতম নেতার কথায়, “লক্ষ্মণ ও অনিলের বিরুদ্ধে দলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে একটি চিরকুটও আজ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিতে পারেননি!”
রাজ্য সম্মেলনের সময় রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেবদের সামনে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছিলেন অমিতাভবাবু। পরে শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে চুপ করেন। পার্টি কংগ্রেসে যাওয়া-সহ দলের সব কর্মসূচিতেই অংশ নেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অনিলবাবুকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হলেও অমিতাভবাবুর বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই সুযোগেই ফের প্রশ্ন তুলেছেন অমিতাভবাবু। রেজ্জাকের মতো তাঁরও ক্ষোভের মূল লক্ষ্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও গৌতম দেব।
অশোক-রেজ্জাকের ঘনিষ্ঠদের দাবি, দু’জনেই রবিবার থেকে নিচুতলার নেতা-কর্মীদের ফোন, এসএমএস পাচ্ছেন। যার মর্মার্থ আলিমুদ্দিনের নেতারা তাঁদের ‘বঞ্চিত’ করেছেন। ‘বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ’ হওয়া সত্ত্বেও অশোকবাবুর সম্পাদকমণ্ডলীতে আসতে না-পারা নিয়ে দলের একাংশের ব্যাখ্যা, মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে ‘ব্যর্থ’। তরাই-ডুয়ার্সের সমস্যাও বুঝতে পারেননি। যার জবাবে এ দিন অশোকবাবু বলেন, “পাহাড়ের সমস্যার সমাধান নিয়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এবং সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই আমি উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী হিসেবে রূপায়ণের চেষ্টা করেছিলাম। নিজে সিদ্ধান্ত নিইনি।” অশোকবাবুর দাবি, পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে দার্জিলিং জেলা কমিটি, রাজ্য পার্টি ও সরকারের নীতিতে ফারাক ছিল না। অর্থাৎ, কোনও ভুল সিদ্ধান্তে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে ‘অরাজক’ অবস্থা তৈরি হলে তার দায় একা তাঁর নয়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেওছেন, “এই অভিযোগে আমায় সম্পাদকমণ্ডলীতে না-নেওয়া হলে অনেকের বিরুদ্ধেই আঙুল তোলা যায়!” অতীতে কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই না-পেয়ে একাধিক বার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী। তখন অন্তত দু’বার জ্যোতি বসু প্রকাশ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। ২০০৮-এ জ্যোতিবাবুর অনুরোধেই সুভাষবাবুকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়। তার পর বেশ কিছু দিন তাঁর মুখ বন্ধ ছিল।
আপাতত তিন ‘বিক্ষুদ্ধে’র মোকাবিলা কোন রাস্তায় করবে আলিমুদ্দিন? নাকি মেনেই নেবে যে, ক্ষমতাহীনতার জমানায় ‘অ-কমিউনিস্ট’ সুলভ এই ‘বিচ্যুতি’ই স্বাভাবিক?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.