স্থায়ীকরণ এবং সঠিক মজুরির দাবিতে গত দেড় মাস ধরে কারখানার গেটের সামনে অস্থায়ী শ্রমিকেরা অবস্থান বিক্ষোভ করলেও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। এই অবস্থায় দাবি না মেটা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই শ্রমিকেরা। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থি থানা এলাকার শিরাকোলের বোঁজবেড়িয়া গ্রামের কাছে লিঙ্ক পেন অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার।
স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে কারখানায় শ্রমিকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। দীর্ঘদিন ধরে দুই ঠিকাদারের অধীনে চুক্তির ভিত্তিতে ওই কারখানায় কাজ করছেন অস্থায়ী শ্রমিকেরা। গত ১৪ এপ্রিল প্রায় ২০০ জন অস্থায়ী শ্রমিকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এর পরে ফের তিনমাসের মেয়াদে নতুন চুক্তি করার আগেই ওই শ্রমিকদের সঙ্গে টিকাদার ও কারখানার ম্যানেজারের বিবাদ বাধে। নতুন চুক্তির সময় তাঁদের কাজের নিশ্চয়তার জন্য নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবি জানান ওই শ্রমিকেরা। সেই সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ২০০ টাকার বেশি এবং প্রভিডেন্ড ফাণ্ড-এর দাবিও তোলেন তাঁরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় শ্রমিকেরা ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের নেতৃত্বে অবস্থায় বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই কর্মীদের অভিযোগ, সরকারি আইন মেনে কারখানা চালানো হচ্ছে না। তাঁরা জানান, শ্রম আইন অনুযায়ীই তাঁরা মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের সমহারে বেতনের দাবি জানিয়েছেন। তা ছাড়া কোনও কারখানায় ১০০ জনের বেশি কর্মী থাকলে সেখানে ক্যান্টিন থাকবে। কিন্তু কোনও নিয়মই কারখানায় মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সুরাহার জন্য তাঁরা সমস্ত বিষয়টি ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসককেও জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের দাবির প্রসঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের সমহারে বেতন দিতে হলে তাঁরা অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করবেন না কেন? ক্যান্টিন নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে ক্যান্টিন চলছে। তবে কয়েক মাস আগে যে ঠিকাদারের অধীনে ক্যান্টিন ছিল তিনি খাবার দাম বাড়ানোয় শ্রমিকদের সঙ্গে বিরোধ বাধে। তার জেরে বন্ধ হয়ে যায় ক্যান্টিন। সমস্যার মীমাংসায় তিন তিনবার বৈঠক ডাকা হলেও কোনও লাভ হয়নি।
অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবির প্রসঙ্গে কারখানার ম্যানেজার বুদ্ধদেব গুপ্তা বলেন, “ওই কর্মীরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন। কিছু করতে বলে ঠিকাদারই করবেন। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কিছু করণীয় নেই।” সরকারি আইন না মেনে কারখানার চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে শ্রমিকেরা শ্রম দফতর পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। আমরাও এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য জানাব।” ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের সভাপতি প্রেমনারায়ণ মিত্র বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকেরা কারখানার নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মহিলা শ্রমিকদের পোশাক পাল্টানোর আলাদা ঘরের ব্যবস্থা নেই। ছুটি, বোনাস নেই। অস্থায়ী শ্রমিকদের ২০০ টাকার বেশি মজুরি প্রাপ্য হলেও তাঁরা পান মাত্র ৮০ টাকা।” তাঁর অভিযোগ, “মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে তাঁর দলবল কিছু দিন আগে কারখানায় এসে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হুমকি দেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানোও হয়েছে।” যদিও গিয়াসুদ্দিনের বক্তব্য, “এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তবে শুনেছি যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরা সকলেই ঠিকাদারের অধীনে কাজ করা অস্থায়ী শ্রমিক।”
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা বসে মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।’’ |