বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভানেত্রী হলেন সোমবারি
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভানেত্রী হলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর সোমবারি সোরেন। বছর পঁয়ত্রিশের সোমবারিদেবী ২০০৮ থেকে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ। সোমবার দুপুরে বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসের সভাঘরে বিডিও সর্বোদয় সাহার পৌরোহিত্যে নতুন সভাপতি নির্বাচনের সভা হয়। হাজির ছিলেন ৯ জন ঝাড়খণ্ডী ও ৩ ‘বিক্ষুব্ধ’ সিপিএম সদস্য। অনুপস্থিত ছিলেন সিপিএমের ৯ জন, ঝাড়খণ্ড পার্টি থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া এক জন এবং অন্য এক ঝাড়খণ্ডী সদস্য।
সভানেত্রী হিসেবে সোমবারিদেবীর নাম প্রস্তাব করেন দুই ঝাড়খণ্ডী সদস্য। সর্বসম্মতিক্রমেই নির্বাচিত হন তিনি। নতুন সভানেত্রী বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য উন্নয়ন করব। মানুষের পাশে থাকব।” সভানেত্রী-নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সোমবারিদেবীকে নিয়ে বেলপাহাড়িতে মিছিল করেন দলের নেত্রী, প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদা। চুনিবালাদেবী বলেন, “২০০৮ থেকে এত দিন ক্ষমতায় থেকে সিপিএম দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ চালিয়েছে। উন্নয়ন হয়নি। শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করব।”
সিপিএমের অবশ্য দাবি, নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে সভানেত্রী নির্বাচন করা হয়েছে। দলের বেলপাহাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক উদ্ধব মাহাতোর বক্তব্য, “দলত্যাগ-বিরোধী আইনে তিন সদস্যের (‘বিক্ষুব্ধ’ সিপিএম) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগেই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সোমবারিদেবী-সহ তিন ঝাড়খণ্ডী কর্মাধ্যক্ষ দীর্ঘ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভা না ডাকায় এবং আরও এক ঝাড়খণ্ডী সদস্য পর পর তিনটি সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য লিখিত ভাবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী সব মিলিয়ে ওই ৭ সদস্যেরই সদস্য-পদ খারিজ হওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপই করা হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।” তবে, প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই সদস্যদের সদস্য-পদ বাতিল নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তাই এখনও কোনও পদক্ষেপ করা যায়নি। সুপ্রতীক সোরেন, সুনীল মুর্মু ও ময়না শীটএই ৩ বিক্ষুব্ধ সিপিএম সদস্য নিজেরাই ইতিমধ্যে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে দলত্যাগের কথা জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
গত মার্চে সিপিএমের নিয়ন্ত্রণাধীন বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হাড়িরাম সিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে বিরোধী ঝাড়খণ্ডীরা। ৯ জন ঝাড়খণ্ডী সদস্য ওই অনাস্থা-প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন। ৫ এপ্রিল প্রশাসনের ডাকা তলবি-সভায় ‘বিক্ষুব্ধ’ ৩ সিপিএম সদস্যের সমর্থন নিয়ে সেই অনাস্থা-প্রস্তাব পাশও করিয়ে নেয় ঝাড়খণ্ডীরা। ওই দিনও সভাপতি হাড়িরামবাবু-সহ সিপিএমের ৯ জন এবং ২ জন ঝাড়খণ্ডী সদস্য গরহাজির ছিলেন। কিন্তু উপস্থিত ১২ জন অনাস্থা পাশ করায় সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হন হাড়িরামবাবু। সিপিএমের যে ৩ ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্য (সুপ্রতীক সোরেন, সুনীল মুর্মু ও ময়না শীট) দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে অনাস্থা-প্রস্তাব সমর্থন করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ-বিরোধী আইনে সদস্য-পদ খারিজের জন্য দলের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসক ও বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়। ৪ ঝাড়খণ্ডী সদস্যের দীর্ঘ অনুপস্থিতির বিষয়েও লিখিত ভাবে মহকুমাশাসককে জানানো হয়। সে নিয়ে প্রশাসন এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি।
২০০৮ পর্যন্ত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় ছিল ঝাড়খণ্ডী-জোটই। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা-দখল করে সিপিএম। শুরুতে ২৬টি আসন-বিশিষ্ট পঞ্চায়েত সমিততে সিপিএম-সদস্য ছিলেন ১৪ জন। ঝাড়খণ্ডী সদস্য ছিলেন ১২ জন। সিপিএমের হাড়িরামবাবু সভাপতি হলেও কর্মাধ্যক্ষ পদগুলি ছিল ঝাড়খণ্ডীদেরই দখলে। পরে মাওবাদীদের হাতে সিপিএমের ২ জন ও এক ঝাড়খণ্ডী সদস্য খুন হন। আসন-বিন্যাস কমে দাঁড়ায় সিপিএমের ১২ এবং ঝাড়খণ্ডীদের ১১। তিন জন দলীয় সদস্য বিক্ষুব্ধ হওয়ায় বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা হয়েছে ৯। সিপিএম এই পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.