বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি বঙ্গারু লক্ষ্মণ ঘুষ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হইয়া চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় কংগ্রেস নাকি উজ্জীবিত। কারণ, দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপি আর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তেমন সরব হইতে পারিবে না, আর কংগ্রেসও প্রত্যাঘাত করিতে পারিবে। এই সম্ভাবনা যদি কংগ্রেস নেতৃত্বকে সত্যই উজ্জীবিত করিয়া থাকে, তবে তাহা পরম দুর্ভাগ্যজনক। দেশের দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল যদি পরস্পরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখর হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই কালাতিপাত করিতে থাকে, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাইবার কৃত্যটি অনির্দিষ্ট কাল স্থগিত রাখা যায়।
এগারো বছর আগে বিজেপি সভাপতি বঙ্গারু লক্ষ্মণ একটি ভুয়া অস্ত্রনির্মাতা সংস্থার কাছ হইতে ভুয়া অস্ত্র কিনিবার জন্য নগদে এক লক্ষ টাকার ঘুষ লইয়াছিলেন বলিয়া সচিত্র প্রমাণ সহ যে অভিযোগ উঠিয়াছিল, তাহার প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁহাকে সভাপতি পদ হইতে সরাইয়া দেন। তথাপি তিনি দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন, দল হইতে সাসপেন্ড বা বহিষ্কৃত হন নাই। তাহার আগেও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাঁহাকে ইস্তফা দিতে হয়। কংগ্রেসের দুর্নীতির বিশদ উল্লেখ বাহুল্যমাত্র। আঞ্চলিক দলগুলির রাজনীতিকরাও কম যান না। এই অবস্থায় সব দলেরই উচিত দুর্নীতি রোধের উপায় ও পন্থা-পদ্ধতি লইয়া গুরুতর অভিনিবেশ। দুর্নীতি যে আর্থিক সংস্কারের সুফলগুলিকে সমাজের নিচু তলায় পৌঁছাইতে দেয় না এবং সরকারি টাকায় অসৎ রাজনীতিক ও আমলাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার বিনিময়ে সমাজ ও জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে, এ কথা সব দলই প্রকাশ্যে কবুল করে। অথচ দলের মধ্য হইতে দুর্নীতিগ্রস্তদের বহিষ্কার বা বিতাড়নের প্রশ্নে সকলেই রক্ষণাত্মক হইয়া পড়ে।
জনসাধারণের কাছে এই গোটা প্রক্রিয়াটি রাজনীতিকদের গড়াপেটা খেলার মতো প্রতিভাত হয়, যে খেলার ফলাফল আগে হইতেই নির্ধারিত। তাই লোকপাল বিল অন্তত পনেরো বার সংসদে বিল আকারে পেশ হইয়াও অনন্ত কাল ধরিয়া স্থগিত হইতে থাকে। অন্না হজারের নেতৃত্বে যখন জনলোকপাল বিলের দাবিতে সিভিল সোসাইটির আন্দোলন তীব্র হইয়া ওঠে, তখন চাপে পড়িয়া সংসদে বিল আনার তোড়জোড় হইলেও শেষ পর্যন্ত তাহাও বিশ বাঁও জলের তলায় তলাইয়া যায়। জনসাধারণ কিন্তু এই সব কিছুই নজর করিতেছেন। তাঁহারা দেখিতেছেন, দুর্নীতির প্রশ্নে কেহই ধোয়া তুলসীপাতা নয়, সব দলই কাচের ঘরে বাস করিয়া অন্যকে ঢিল ছুঁড়িতেছে। হয়তো তাঁহারা নিরুপায়। দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক দল খুঁজিয়া না পাইয়াই ‘অপেক্ষাকৃত কম’ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের ভোট দেন। কিন্তু ইহা রাজনীতিকদের সান্ত্বনা বা উজ্জীবনের হেতু হইতে পারে না। |