এনসিটিসি
মমতার সঙ্গে একসুর রাজ্যপাল, নরম কেন্দ্র
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিক দলের নেত্রীকে রুষ্ট করে কোনও ভাবেই জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) নিয়ে এগোতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
এনসিটিসি নিয়ে মমতা অবশ্য একা নন। ৫ মে-র বৈঠকে এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের প্রশ্ন তুলে সরব হবেন নরেন্দ্র মোদী, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়ক-সহ বহু মুখ্যমন্ত্রীই। কিন্তু কেন্দ্রের কাছে ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলের গুরুত্ব আলাদা। তার উপর সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তাই কোনও ভাবেই মমতাকে চটাতে না-চাওয়া কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান লঘু করার কৌশল নিয়েছে। তা ছাড়া, প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও এনসিটিসি প্রশ্নে মমতারই পক্ষে। এই অবস্থায় প্রণব মুখোপাধ্যায় বা এ কে অ্যান্টনির মতো শীর্ষ মন্ত্রীরাও এনসিটিসি-র বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রেও বলা হচ্ছে, এনসিটিসি নিয়ে খুব বেশি সাহসী পদক্ষেপ করবে না কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য আজও এনসিটিসি-র ‘সুবিধা’ ব্যাখ্যা করেছেন। বস্তুত, এনসিটিসি নিয়ে হাওয়া বুঝতে ক’দিন আগেই পুরনো খসড়াটি রাজ্যে রাজ্যে পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। মমতা-সহ মুখ্যমন্ত্রীরা গোড়া থেকে যে বিষয়গুলি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন, ওই খসড়ায় সেগুলিকে রেখেই দেওয়া হয়েছিল।
নারায়ণন যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন, তখন থেকেই এনসিটিসি নিয়ে আলোচনা চলছে। তখনই তিনি এনসিটিসি-র বিষয়টি সামগ্রিক প্রেক্ষাপট থেকে দেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যুক্তি দিয়েছিলেন। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজ্যপাল হওয়ার পরেও তিনি একতরফা ভাবে এনসিটিসি চালুর বিপক্ষে।
নারায়ণন মনে করেন, এ ধরনের সংস্থা যদি রাজ্য সরকারের মত গ্রহণ না করে তৈরি করা হয়, তা হলে বাস্তবে প্রয়োগ করা কঠিন হবে। কারণ কাউকে গ্রেফতার করার পর তাকে রাজ্য পুলিশের হাতেই তুলে দিতে হবে এনসিটিসি-কে। রাজ্যের কোথাও অভিযান চালানোর ক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই একতরফা ভাবে এনসিটিসি গঠন হলে সমন্বয়ের অভাব থেকেই যাবে। তা ছাড়া, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-কে ২০০৮ সালেই নতুন আইন করে সরাসরি গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন একই ক্ষমতা দিয়ে আর একটি সংস্থা তৈরি করে লাভ কী, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
দ্বিতীয়ত সরকারেরই একাংশ এটা মানতে নারাজ যে, কেন্দ্রে একটা সংস্থা হলেই সন্ত্রাস দমন হয়ে যাবে। তা ছাড়া, বিজেপি যখন ফেডেরাল পুলিশ তৈরির প্রস্তাব এনেছিল, তখনও তার বিরোধিতা করা হয়েছিল। কাজেই এই ধরনের আইন সর্বসম্মতিক্রমে করাই ভাল। তার আগে রাজ্য স্তরে পুলিশকে আরও কার্যকর করা বেশি জরুরি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কতার্রা বলছেন, সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশে পুলিশের যে দাবি, নারায়ণন তা-ই তুলে ধরেছেন।
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এনসিটিসি-র ক্ষমতা লঘু করার পথে হাঁটছে। রাজ্যগুলির কাছে এনসিটিসি-র কাজকর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে যে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর’ (এসওপি) পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এনসিটিসি সাধারণ ভাবে রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই গ্রেফতারি অভিযান বা তল্লাশি চালাবে। একমাত্র ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেই কোনও সন্ত্রাসবাদীকে সরাসরি গ্রেফতার করবে এনসিটিসি। রাজ্যে অভিযানের আগে সেখানকার শীর্ষ পুলিশকর্তা বা রাজ্যের সন্ত্রাসদমন বাহিনীর প্রধানকে ‘যত দূর সম্ভব’ আগে জানানো হবে। রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে এনসিটিসি-কে গ্রেফতার বা তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা দেওয়ার প্রশ্নটি নিয়েই মূলত মুখ্যমন্ত্রীরা আপত্তি তোলেন।
মমতা দিল্লিতে এনসিটিসি-র বৈঠকে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও এ যাত্রায় কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন না বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.