একাধিক দরজা ভেঙে, বাড়িতে ঢুকে কুড়ি মিনিট ধরে তাণ্ডব চালাল একদল ডাকাত। জখম করল গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রীকে। ‘অপারেশন’ শেষে নির্বিঘ্নে রাস্তা দিয়ে পালিয়েও গেল তারা। অথচ কোথাও কোনও পুলিশের দেখা নেই। শহরের নিরাপত্তার ভার যাদের হাতে, সেই পুলিশবাহিনী তখন ডাকাতির ‘খবর’ পেয়ে ধাওয়া করে এক বিয়েবাড়ির গাড়িকে আটকাতে তৎপর। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে কমিশনারেট গঠনের পরেও সল্টলেকের ছবিটা এমনই। পুলিশের যুক্তি, সল্টলেকে এখনও ওয়্যারলেস পরিকাঠামো দুর্বল। তবে রাস্তায় টহলদার পুলিশের দেখা মিলল না কেন, তার ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি।
সোমবার ভোরে এ ডি-১২৫ নম্বর বাড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে, সল্টলেকে এমন নতুন নয়। কয়েক বছর আগেও কেষ্টপুর খালের ধারে একটি বাড়িতে ডাকাতদের হাতে আক্রান্ত হন এক বৃদ্ধা। গত বছরই সল্টলেকের সিএফ ব্লকে ডাকাতি করে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি ছুড়তে ছুড়তে বেরিয়ে যায় ডাকাতেরা। কিন্তু সে সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলার পুলিশের অধীনে ছিল সল্টলেক।
আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির স্বার্থেই ক’মাস আগে বিধাননগরকে কমিশনারেট এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। সল্টলেকের চারটি থানা-সহ আশপাশের ৯টি থানা নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেট তৈরি হয়েছে। উর্দিধারী পুলিশের পাশাপাশি নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে দিনে ও রাতে গ্রিন পুলিশের টহলদারি ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশকর্তাদের।
এত কিছু সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাড়েনি বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা। সেখানকার বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর কথায়, “কমিশনারেট হওয়ার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। আশা করি এ বার অন্তত আগের তুলনায় কম সময়ে তদন্ত শেষ করবে পুলিশ।”
সোমবার ভোরের ঘটনায় গৃহকর্তা সুরিন্দরবাবুর প্রতিবেশী বিবেক দে-র অভিযোগ, “পুলিশি টহলদারি সব সময়ে থাকে না। গ্রিন পুলিশ মাঝেমধ্যে দেখা যায়।” পুলিশের সন্দেহ, ডাকাতির পরে যে পথে দুষ্কৃতীরা পালায় সেটি সল্টলেকের ব্রডওয়ে। সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে বড় রাস্তায় পুলিশি নজরদারির হাল নিয়েও। যদিও রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদও ওই এলাকায় গ্রিন পুলিশ টহল দিয়েছে বলেই দাবি পুলিশের।
কমিশনারেট তৈরির পরেও মোবাইল ছিনতাই কিংবা কেপমারির ঘটনা ঘটেছে। দিনে দুপুরে ছিনতাই হয়েছে লেকটাউনে। জোড়া খুন হয়েছে বাগুইআটিতে। দু’টি মন্দিরে বিগ্রহের গয়না খুলে নিয়ে গেছে দুষ্কৃতীরা। এমন অনেক ঘটনারই এ পর্যন্ত কিনারা হয়নি। বিধাননগরের পুলিশ সুপার রাজীব কুমারের বক্তব্য, “কমিশনারেট তৈরি হওয়ায় পুলিশি ব্যবস্থায় অনেক বদল এসেছে। আস্তে আস্তে উন্নত হচ্ছে পরিকাঠামো। এখনও অপরাধ পুরো বন্ধ করা যায়নি। তবে আগের তুলনায় অপরাধ অনেক কমেছে। সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে।”
সেই সঙ্গেই রাজীববাবুর বক্তব্য, অপরাধ আটকানোর আগাম ব্যবস্থা করতে গেলে অনেক পুলিশকর্মী প্রয়োজন। নতুন ভাবে নিয়োগ হয়েছে। তাঁদের অনেকের ট্রেনিং চলছে। ওই ফোর্স এসে গেলে আরও ভাল ভাবে মোকাবিলা করা যাবে। এ ধরনের ঘটনার মোকাবিলা করতে আরও উন্নত ওয়্যারলেস সিস্টেম গঠন করব। তা হয়ে গেলে, আরও একটু ভাল হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। |