শুধু ‘আবেদনেই’ ছাপিয়ে গেল ওয়েভার স্কিমের অতীতের সব রেকর্ড। সোমবার পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল। এই সাফল্যের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতা পুরসভার ওয়েভার স্কিমের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছেন, আগামী ১৫ মে পর্যন্ত ওয়েভার স্কিমে বকেয়া সম্পত্তিকর দেওয়া যাবে। রবিবার ছুটির দিনেও খোলা থাকবে পুরসভার কর আদায়ের সব কাউন্টার।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন ২০০১ ও ২০০৪ সালে ওয়েভার স্কিম চালু করে তৎকালীন তৃণমূল-বিজেপি শাসিত বোর্ড। দু’দফায় সে বার আদায় হয়েছিল প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা। মেয়র শোভনবাবু বলেন, “সে বার বকেয়া কর না দিলে জলের লাইন কেটে নেওয়ার হুমকি ছিল। এ বার নাগরিকদের কাছে শুধুমাত্র আবেদন জানানো হয়েছিল। তাতেই ভাল ফল মিলেছে।”
সোমবার ছিল ওয়েভার স্কিমে কর আদায়ের শেষ দিন। এ দিন পর্যন্ত বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ ৩০৫ কোটি টাকা। এ দিন সন্ধ্যায় মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই ওয়েভার স্কিম চালু হয়। তাঁর নির্দেশেই আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানো হল।” অন্য দিকে, সম্পত্তিকর আদায়ের এই আশাতীত সাফল্যে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের ভূমিকায় খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বকেয়া কর আদায়ে এ বার রেকর্ড করেছে কলকাতা পুরসভা।
পুরসভা সূত্রের খবর, দীর্ঘ কাল ধরে সম্পত্তিকরের আসল, সুদ ও জরিমানা বাবদ প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা নাগরিকদের কাছে পাওনা ছিল পুরসভার। ওই টাকা আদায়ের জন্য সুদ ও জরিমানা ছাড় দিয়ে ‘ওয়েভার স্কিম’ চালুর সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাসের জন্য ওই স্কিম চালু হয়।
মেয়র পারিষদ (কর মূল্যায়ন) দেবব্রত মজুমদার এ দিন জানান, এ বার বকেয়া করদাতার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। এর মধ্যে কোটি টাকার উপরে বকেয়া থাকা ১১ জন, পাঁচ লক্ষের উপরে ৮৪০ জন, এক লক্ষের উপরে ৫৩৬০ জন-সহ প্রায় দেড় লক্ষ করদাতা সোমবার পর্যন্ত ওয়েভার স্কিমের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছেন। সোমবার শেষ দিনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। তিনি বলেন, “আগে কর আদায়ে জাবদা খাতার প্রচলন ছিল। এখন সবই কম্পিউটারে। করদাতাদের ‘নো আউটস্ট্যান্ডিং’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।”
এক পদস্থ পুর-আধিকারিকের কথায়, আগে কর আদায়ের রেকর্ড পুরসভার খাতায় নিয়মিত তোলা হত না। ফলে কর মেটানোর পরেও একই ব্যক্তির কাছে বকেয়া করের নোটিস পাঠানো হত। এ নিয়ে বিপদে পড়তেন সাধারণ মানুষ।
ওয়েভার স্কিমের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা বকেয়া কর দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ফের জানিয়েছেন মেয়র। তাঁর আশা, আগামী ১৫ দিনে কর আদায়ের পরিমাণ মোট ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। |