পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন
বধূ-মৃত্যুর তদন্তে গোঁজামিল,
শাস্তির মুখে অফিসার

কিছু দিন আগেই খোদ পুলিশ কমিশনারকে এজলাসে দাঁড় করিয়ে তিরস্কার করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশ যে ‘অকর্মণ্য’, চাঁছাছোলা ভাষায় মন্তব্য করেছিল তারা। এ বার কলকাতা পুলিশের তদন্ত চালানোর পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে তদন্ত-প্রক্রিয়াকে ভুল পথে চালিত করার দায়ে তপসিয়া থানার এক অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি। ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার রাজেশ মিন্টের ভূমিকাকে কলকাতা পুলিশের ‘লজ্জা’ বলেও মন্তব্য করেছে উচ্চ আদালত।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় এফআইআর লেখা, তদন্ত চালানোর পদ্ধতি নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। তপসিয়া থানার একটি ঘটনার ‘দায়সারা’ তদন্ত নিয়ে হাইকোর্ট এ দিন সেই প্রশ্নটাই তুলেছে। হাইকোর্টের মন্তব্য, যেখানে তদন্ত প্রয়োজন, সেখানে তদন্ত হচ্ছে না। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই ‘সামান্য’ বিষয়কে বড় করে দেখাতে চাইছে পুলিশ। ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের জামিনের আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
আবেদনকারী তপসিয়া রোডের বাসিন্দা, ৭০ বছরের নানহে খানের আইনজীবী শ্রেয়সী বিশ্বাস ডিভিশন বেঞ্চকে বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি তাঁর মক্কেলের পুত্রবধূ খুশবুন্নেসা অগ্নিদগ্ধ হন। রাত ১২টায় তাঁকে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। খুশবুর বাপের বাড়ির লোকজন বধূ-নিগ্রহ ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন তপসিয়া থানায়। পুলিশ খুশবুর স্বামী নৌশাদ বা বাড়ির অন্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। খুশবুর ৭০ বছরের বৃদ্ধ শ্বশুরকে গ্রেফতার করে তারা।
বৃদ্ধ আবেদনকারীর আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরেই বিচারপতি পুলিশের কেস ডায়েরি ও জেনারেল ডায়েরি দেখতে চান। কেস ডায়েরি বলছে, ঘটনার পরের দিন রাজেশবাবু সকাল সাড়ে ৭টায় হাসপাতালে যান। তদন্ত সেরে বেলা সাড়ে ১১টায় থানায় ফিরে কেস ডায়েরিতে লেখেন, চিকিৎসকেরা খুশবুকে কড়া মাত্রার ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। তাই তিনি অচৈতন্য। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, সে-দিন আর তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব নয়। ওই একই দিনে তদন্তকারী অফিসার জেনারেল ডায়েরিতে লেখেন, বেলা ২টোয় খুশবুর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেস ডায়েরিতে তা লেখা হয়নি। ওই ঘটনার পাঁচ দিন পরে খুশবুর মৃত্যু হয়। পাঁচ দিন আগের জবানবন্দিকেই তদন্তকারী অফিসার পরে খুশবুর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
সাড়ে ১১টায় যে-রোগিণী অচৈতন্য, সারা দিন যাঁর জবানবন্দি দেওয়ার মতো অবস্থাই ছিল না, আড়াই ঘণ্টা পরেই • তিনি এমন শক্তি সঞ্চয় করলেন কোন মন্ত্রবলে?
• রোগিণী এত দীর্ঘ জবানবন্দি দিলেনই বা কী ভাবে?
• পাঁচ দিনের মধ্যে তপসিয়া থানা বিষয়টি ম্যজিস্ট্রেটের আদালতে জানাল না কেন?
• ওই মহিলা তো আরও চার দিন বেঁচে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তদন্তকারী অফিসার আর এক বারও হাসপাতালে গেলেন না কেন?
সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় বৃদ্ধের জামিনের বিরোধিতা করলেও তাঁর দাবির পক্ষে কোনও যুক্তি দেখাতে পারেননি। হাইকোর্ট খুশবুর শ্বশুরের জামিন মঞ্জুর করে বলে, দায়সারা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্তের ফলে এই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য কোনও দিনই প্রকাশিত হবে না বলে সন্দেহ হচ্ছে। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, কলকাতাতেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে জেলার থানায় কী অবস্থা, তা সহজেই বোঝা যায়। বিচারপতি অসীম রায় তাঁর রায়ের প্রতিলিপি কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার (সদর) এবং ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব)-র কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অবিলম্বে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেস ডায়েরি ও জেনারেল ডায়েরি নিজেদের হেফাজতেই রেখে দিয়েছে উচ্চ আদালত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.