পুলিশের খাতায় তিনি ‘ফেরার’। অথচ সোমবার আদালত-চত্বরে একটানা প্রায় সাত ঘণ্টা রইলেন বধূ-
নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত ওই মহিলা। মামলার তদন্তকারী অফিসারেরা হাজির। একই মামলায় মহিলার ছেলেকে
|
অনুভা দাস। ছবি: স্টার
আনন্দের সৌজন্যে। |
এ দিন হাজির করানো হল ওই আদালতেই। আইনজীবীর পাশে বসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বললেন অভিযুক্ত প্রৌঢ়া। শুধু পুলিশই তাঁকে খুঁজে পেল না!
সোমবার আত্মসমর্পণের ইচ্ছে নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলিপুর আদালতে হাজির হয়েছিলেন প্রৌঢ়া অনুভা দাস। কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে পুত্রবধূকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আদালতে পৌঁছলেও অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ দিন শেষ পর্যন্ত আর আত্মসমর্পণ করা হল না প্রৌঢ়ার। দিনের শেষে সকলের সামনে দিয়েই তিনি চলে গেলেন ‘অজ্ঞাতবাস’-এ। ওই মামলায় তাঁর বড় ছেলে, বড় পুত্রবধূ এবং নবম শ্রেণিতে পড়া নাতনিকে খুঁজছে পুলিশ।
আদালতে আইনজীবীর পাশে দাঁড়িয়ে অনুভাদেবী এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওই দিন (২৩ এপ্রিল) রাতে আমি ওকে (পুত্রবধূকে) মারধর করিনি। ও-ই চুলের মুঠি ধরে আমাকে মারে। বাড়ির সামনেই ছিলাম সবাই। ও ঘরে ঢোকেইনি। ওকে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম আমি।” তা হলে তাঁর পুত্রবধূর ঠোঁটে আঘাত লাগল কী ভাবে? অনুভাদেবী বলেন, “ও ইচ্ছে করেই নিজের নখ দিয়ে ঠোটে আঁচড় কেটেছিল।”
পুলিশের কাছে না-গিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এলেন কেন?
প্রৌঢ়া বলেন, “আমি নির্দোষ। তাই সুবিচার চাইতে আইনের কাছে এসেছিলাম।” এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে পৌঁছন অনুভাদেবী। তাঁর আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যের সেরেস্তায় চলে যান তিনি। বিকেল পৌনে ৬টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন ওই প্রৌঢ়া। তিনি যখন আইনজীবীর কাছে বসে, তার মধ্যেই পুলিশ অনুভাদেবীর ছোট ছেলে (নির্যাতিতা বধূর স্বামী) বাদলকে আদালতে হাজির করাতে নিয়ে আসে।
আদালতে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় বসে থাকলেও পুলিশ অভিযুক্ত প্রৌঢ়ার নাগাল পেল না কেন? লালবাজারের পুলিশকর্তাদের যুক্তি, আদালত-চত্বরে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে সমস্যা হতে পারে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এটা অবশ্য কোনও নিয়ম নয়। তবে এটাই রীতি। আইনজীবীদের সঙ্গে গণ্ডগোল এড়াতে পুলিশ এই রীতি মেনে চলার চেষ্টা করে।”
আদালত থেকে বেরোনোর পরেও অভিযুক্ত মহিলাকে ধরা হল না কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। আসলে অনুভাদেবী যে আইনজীবীর সঙ্গে আদালতে বসে আছেন, সেই খবরই ছিল না পুলিশের কাছে!
অনুভাদেবীর আইনজীবী দিব্যেন্দুবাবু জানান, এ দিন তাঁর মক্কেল আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে আদালতে আবেদনও জমা দেওয়া হয়েছিল। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “আমার সেরেস্তায় থাকাকালীনই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনুভাদেবী। সেই জন্য শেষ পর্যন্ত মত বদলে ফিরে যান তিনি।”
ওই মামলায় অনুভাদেবীর ছোট ছেলে বাদলকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এস এম শাহনওয়াজ। |