বামফ্রন্টের আমলে কিছু দুষ্কৃতী সুরেন্দ্রনাথ কলেজে দাপিয়ে বেড়াত। সরকার পরিবর্তনের পরে তারাই তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্বের নাম ভাঙিয়ে কলেজে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে খোদ অধ্যক্ষের অভিযোগ। ওই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
ওই কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময়শেখর সরকার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতীদের নাম দিয়ে তিনি মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে কোনও লাভ হয়নি। উল্টে ওই সব দুষ্কৃতীর তাণ্ডব আরও বেড়েছে। কেলে ভোলা, স্লেহাশিস মণ্ডল, দেবা, বিহারি, হিরা রামের মতো ১১ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের হাত থেকে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন চিন্ময়বাবু।
অধ্যক্ষের দাবি, তিনি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও আশ্বাস পাননি। তবে ব্রাত্যবাবু সোমবার বলেন, এই ধরনের কোনও চিঠি তিনি এখনও পাননি। পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। মুচিপাড়া থানার দাবি, তারা বেশ কিছু দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। আত্মসমর্পণও করেছে কয়েক জন। আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তারা তা নিচ্ছে। কিন্তু এ-সবের পরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষের।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে অধ্যক্ষ লিখেছেন, নতুন সরকার আসার পরে কলেজের পরিচালন সমিতি নতুন করে তৈরি হয়েছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ব্যবস্থাও। কলেজে ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু ওই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে কলেজের পরিস্থিতি কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। বাম আমলে শাসক দলের আশ্রয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা ভোল পাল্টে তৃণমূলে ঢুকে গিয়েছে। নেতাদের নাম করে হুমকি দিচ্ছে তারা।
লালাবাজার সূত্রের খবর, সিটি কলেজের মতো সুরেন্দ্রনাথ কলেজেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছে। আর তার জেরেই নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সোমবারেও আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে। তার জেরে এ দিন দুপুরে কিছু ক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট। পুলিশ জানায়, এ দিন এক গোষ্ঠীর সমর্থকেরা অন্য গোষ্ঠীর সমর্থকদের তাক করে ইট ছোড়ে। এই ঘটনায় সামান্য আহত হয়েছেন কয়েক জন ছাত্র। তবে কোনও গোষ্ঠীই কারও বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেনি। পুলিশ নিজের থেকেই মামলা রুজু করেছে। চার জনকে আটক করা হয়েছে।
ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ ক্লাস ৪ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। |