|
|
|
|
ছিল সতীন, পাতিয়েছে সই |
আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে
ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ২৫ ও ২৬।
সুব্রত সীট |
প্রেমে ত্রিকোণ হয়। ভোটেও।
গত বার ২৫ আর ২৬-এ ঠিক সেটাই হয়েছিল।
গোটা দুর্গাপুর জুড়ে সে সময়ে কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি মাখোমাখো ব্যাপার, যাকে বলে ‘অলিখিত মহাজোট’। ব্যতিক্রম ন’টি ওয়ার্ড। তারই অন্যতম ২৫ ও ২৬।
সে বারের তিনমুখো লড়াইয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুবিধা পেয়েছিল সিপিএমই। কিন্তু তৃণমূল ভোট কাটা সত্ত্বেও ২৬ নম্বরে কংগ্রেসকে তারা হারাতে পারেনি।
২৫ নম্বরের কাউন্সিলর তপন ঘোষ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি কিন্তু অনেক সাফল্য দাবি করছেন। পাড়দৈ, হরিবাজার, মুজরা কোঁদা, অমরাবতী, টিচার্স কলোনি, আইওসি আবাসন, ফুলঝোড় গ্রাম, কো-অপারেটিভ এলাকা, পার্ক অঞ্চল, ভ্যামবে ও আম্মা কলোনি নিয়ে এই ওয়ার্ড। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হরিবাজার থেকে পাড়দৈ যাওয়ার রাস্তায় আগে সন্ধ্যা নামলেই চুরি ছিনতাই লেগেই থাকত। সে রাস্তায় চড়া বিজলি বাতি লাগানো হয়েছে। মুজরা কোঁদা থেকে জেমুয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিছন পর্যন্ত আটটি কালভার্ট-সহ কংক্রিটের রাস্তা গড়া হয়েছে। তার জন্য জমি দিয়েছেন জেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। ১৩০টি বিএসইউপি প্রকল্পে দুঃস্থদের জন্য বাড়ি হয়েছে।
তৃণমূল নেতা অরূপ রায় অবশ্য পাল্টা বলেন, “ফুলঝোড় বাউরিপাড়ায় রাস্তা বেহাল। ভ্যামবে কলোনিতে পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র। পাড়দৈ ও হরিবাজারে মজা পুকুর সংস্কারের ব্যবস্থা হয়নি। গোটা ওয়ার্ডে একটিও ফুটবল মাঠ নেই। শিশুদের জন্য পার্ক নেই।” তাঁর অভিযোগ, বিএসইউপি বাড়ি বিলিতে অনিয়ম হয়েছে। কারচুপি হয়েছে বিপিএল তালিকাতেও। স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা কংগ্রেস সহ-সভাপতি সন্দীপ নায়ক বলেন, “পুকুর বা ডোবা সংস্কার না হওয়ায় ব্যাপক মশার উপদ্রব। নতুন গড়ে ওঠা বসতি এলাকায় নিকাশির ব্যবস্থা হয়নি।” |
|
|
মজে গিয়েছে ২৫ নম্বরের ‘নতুন পুকুর’। |
২৬ নম্বরে নিকাশি বেহাল। |
|
নালিশ রয়েছে এলাকাবাসীরও। আদিবাসী অধ্যুষিত মুজরা কোঁদার বাসিন্দা নারায়ণ মান্ডি বলেন, “এটা প্রত্যন্ত এলাকা। পানীয় জলের কোনও সংযোগ নেই।” হরিবাজারের হোসেন আলির অভিযোগ, “কুয়োর জল খাই। কয়েক বালতি তোলার পরেই জল অপরিষ্কার হয়ে যায়।” পাড়দৈ-এর রামপ্রসাদ মাকু বলেন, “বাউরিপাড়ার কুয়ো ধসে গিয়েছে। সংস্কার হয়নি। জলপরীক্ষাও হয় না।” ফুলঝোড়ের প্রদীপ গোস্বামী বলেন, “বাউরিপাড়া ও লোহারপাড়ায় নিকাশির বালাই নেই।” বাউরিপাড়ার রেখা পালের ক্ষোভ, “কমিউনিটি শৌচাগার না থাকায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে মাঠে প্রাতকৃত্য সারতে যেতে হয়।”
কংগ্রেসের কেল্লা ২৬ নম্বরে না-কাজের নালিশ তুলনায় কম।
সুভাষপল্লি, আলিঙ্গন, ইএসআই হাসপাতাল, এবিএল কলোনি, ধোপিঘাট, শ্রীরাম পার্ক, সূর্য সেন কলোনি, স্বপ্না মার্কেট, বাবুরবাঁধ, ঝরনাপল্লি, পশ্চিম পল্লি, ক্ষুদিরাম পল্লি নিয়ে এই ওয়ার্ড। কাউন্সিলর শাশ্বতী কর্মকারের দাবি, জলের সমস্যা মিটেছে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বর্জ্য সরানোর ব্যাপারে চলে কড়া নজরদারি। ৫টি কমিউনিটি শৌচাগার গড়ার কাজ চলছে। চারটি শিশু উদ্যান নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিএসইউপি প্রকল্পে দুঃস্থদের জন্য ৬০টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। মামরা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।
নাগরিকদের কিন্তু কিছু অনুযোগ আছে। পশ্চিমপল্লির মহম্মদ জহরের খেদ, “কমিউনিটি শৌচাগারের দরজা ভাঙ্গা। দুর্গন্ধ ছড়ায়। ব্যবহার করা যায় না।” ঝরনাপল্লির মিনতি সাধুর ক্ষোভ, “রাস্তা সংস্কার হয়নি। রাস্তার ধারে আলোও জ্বলে না ঠিক মতো।” কাউন্সিলর অবশ্য নিজেই বলেন, “ঝরণাপল্লি ছাড়া ক্ষুদিরামপল্লিতেও একই অবস্থা। দু’টি কাজের অনুমোদন পুরসভা থেকে মিলেছিল। ভোট চলে আসায় কাজ শুরু করা গেল না।”
এলাকার সিপিএম নেতা, শিক্ষক সুকুমার ঘোষ অবশ্য অভিযোগ করেন, “বস্তি অঞ্চলে বিদ্যুৎ এলেও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। কাউন্সিলর তদ্বির করেন না। বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হয় বেছে বেছে। কাউন্সিলর বসেন দলীয় কার্যালয়ে। সব কিছুতে রাজনৈতিক পক্ষপাত চলছে”
এ কথা ঠিকই যে, কাউন্সিলর দলীয় কার্যালয়ে বসলে অনেকেরই, বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মানুষজনের সেখানে যেতে সঙ্কোচ হয়। “শুধু তো ওখানে না, বাড়িতেও আসেন অনেকে” দাবি করেন শাশ্বতীদেবী।
প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর বংশীবদন কর্মকারের স্ত্রী শাশ্বতী। ২০১০-এ তৎকালীন দুর্গাপুর ১ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএমের কাছে হারেন বংশীবদন।
কী আছে শাশ্বতীদেবীর ভাগ্যে?
আগের বারের ‘সতীন’ তৃণমূল আপাতত সই পাতিয়েছে, যাকে বলে ‘জোট’। অঙ্কটা খুব জটিল কি? |
|
ছবি: বিকাশ মশান। |
|
|
|
|
|