রান্নাঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে ভষ্মীভূত হয়ে গেল প্রায় গোটা গ্রাম। রবিবার দুপুরে মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরীপুর এলাকায় ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল পৌঁছানোর আগে বাসিন্দারাই পাম্পের সাহায্যে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রবল পশ্চিমা হাওয়ায় আগুন গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কাচা ও পাকা মিলিয়ে ১৫০ বাড়ি। পরে চাঁচল থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এলাকায় পৌঁছতেই কে আগে বাড়ির আগুন নেভাবেন তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় দমকল কর্মীদের। আগুনে ঘরবাড়ি-সহ মজুত ধান, চাল, পাট, গম এমনকী নগদ টাকা-সহ সর্বস্ব খুইয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন ৭৫টি পরিবারের চারশোর বেশি বাসিন্দা। আগুনে পুড়ে গিয়েছে ১৪টি ছাগল-সহ বহু হাঁস-মুরগি। দুপুরে ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে সর্বস্ব হারিয়ে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার পরই এলাকায় যান মহকুমাশাসক, চাঁচল-২ এর বিডিও, মালতিপুরের বিধায়ক-সহ রাজনৈতিক দলের নেতারা। রবিবারও চাঁচলের চারালু এলাকায় শতাধিক বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার কয়েকদিন আগেও দুটি এলাকায় আগুনে পুড়ে যায় দুটি গ্রাম। তার পরেও মহকুমার জন্য একটি মাত্র ইঞ্জিন কেন তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনেই প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষুব্ধ মালতিপুরের বিধায়কও। |
চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার বলেন, “কেউ হতাহত না হলেও ৭৫টি পরিবারের ৪০০ মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। দুর্গতদের ত্রাণের ত্রিপল-সহ ১২ কেজি করে চাল, শুকনো খাবার ও পোশাক দেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “চাঁচলে দমকলের একটিমাত্র ইঞ্জিন রয়েছে। ফলে সর্বত্র আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এখানে আরও একটি ইঞ্জিন দরকার। সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।” পুলিশ, দমকল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সোরাব আলির বাড়ির রান্নাঘর থেকে এদিন প্রথম আগুন লাগে। হাওয়ায় তা এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ওই গ্রামেই বাড়ি ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যা মহসিনা বিবির। তাঁর পাকা বাড়ি-সহ সমস্ত আসবাবপত্র ছাই হয়ে গিয়েছে। ওই সদস্যা বলেন, “দমকল থেকে আমাদের কী লাভ হল! সব শেষ হয়ে গেল।” ” “ফসল বেচে টাকাটা রেখেছিলাম। কালই ব্যাঙ্কে জমা দিতাম। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম না। ফিরে দেখি সব শেষ।” আর এক বাসিন্দা মহম্মদ আলি জানান, পরনের লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, “অধিকাংশ মানুষেরই পরনের পোশাকটুকু ছাড়া কিছু নেই। দুর্গতদের যাতে ত্রাণের সমস্যা না হয় তা প্রশাসনকে দেখতে বলেছি।” পাশাপাশি বিধায়ক বলেন, “চাঁচল দমকল কেন্দ্রে একটি মাত্র ইঞ্জিন। একদিকে নেভালে অন্যদিকে আগুন জ্বলতে থাকে। বিধানসভার অধিবেশনে বিষয়টি তুলব।” ঘটনার সময় আগাগোড়া হাজির ছিলেন চাঁচলের আইসি জ্যোতিষ রায়! তিনিও বলেন, “একটা ইঞ্জিনে কী এরকম ঘটনা সামাল দেওয়া যায়!” |