ফের ‘সুর বদল’ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের।
রবিবার ভুটান সীমান্তে ডুয়ার্সের জয়গাঁয় এক কর্মী-বৈঠকে গুরুঙ্গ দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের দার্জিলিং পাহাড়ে ঢুকতে না দেওয়ার ‘হুমকি’ তিনি দেননি। বলেন, “আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। আমি সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা বলেছি। কারণ, আমরা সভা করে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর বিষয়গুলি মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই। তা-ও সভার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।” তবে রাজ্যর উপরে ‘চাপ’ বজায় রাখার ‘অবস্থান’ থেকে মোর্চা সভাপতি যে পুরোপুরি সরছেন না, সে ইঙ্গিতও মিলেছে। গুরুঙ্গের কথায়, “সরকার আমাদের সভার অনুমতি না দেওয়া অবধি তরাই, ডুয়ার্সে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ চলবে। আমি ডুয়ার্সেই থাকব।”
এমনিতেই মোর্চার বিরোধী শিবিরের ‘তরাই ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে এ দিন জনজীবনে প্রভাব পড়েছে ডুয়ার্সে। বিন্নাগুড়িতে বন্ধ সমর্থনকারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। চালককে মারধর করা হয়। রাতে মালবাজারে বন্ধের সমর্থনে মাইকে প্রচার করা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। দু’জায়গাতেই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাই মোর্চা নেতৃত্বাধীন ‘যৌথ মঞ্চ’-এর আজ, সোমবার থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে প্রশাসনের। |
রবিবার জয়গাঁয় বিমল গুরুঙ্গ ও রোশন গিরি। ছবি: নারায়ণ দে |
রাজ্যের ‘বিরুদ্ধে’ মন্তব্য করে ‘অবস্থান বদল’ অবশ্য গুরুঙ্গের নতুন নয়। কিছু দিন আগেই রাজ্য সরকার মোর্চার সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে বলে ‘তোপ’ দেগেছিলেন গুরুঙ্গ। কিন্তু অনতিবিলম্বে তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার বিরোধ নেই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটবে। শনিবার ডুয়ার্সের চামুর্চিতে মোর্চা সভাপতি মন্ত্রীদের পাহাড়ে ঢুকতে না দেওয়ার ‘হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি, জিটিএ-প্রত্যাখ্যান এবং রাজ্য সরকারের ‘মাথাব্যথা’র কারণ হওয়ার মতো আন্দোলনের ‘হুঁশিয়ারি’ও দিয়েছিলেন। কী হল এক রাতে?
মোর্চা সূত্রের খবর, শনিবার রাতে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রবিবার ডুয়ার্সের নাগরাকাটায় যে সভার অনুমতি না মেলায় গুরুঙ্গের এই ‘অসন্তোষ’, তার বিরোধিতায় ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে এ দিন ডুয়ার্সে ট্রেন এবং বেসরকারি গাড়ি চলেনি। হাতেগোনা সরকারি বাস চলেছে। হাট-বাজার বন্ধ ছিল। সাপ্তাহিক হাট না বসায় চা বাগান এলাকার শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়েন। কমিটির আহ্বায়ক তেজকুমার টোপ্পোর দাবি, “ডুয়ার্সের মানুষ কী চান, এ দিনের বন্ধে পরিষ্কার। আমরা রাস্তায় নামিনি। মানুষই বন্ধ সফল করেছেন।” পক্ষান্তরে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি, মঞ্চের আহ্বায়ক জন বার্লার দাবি, “তরাই-ডুয়ার্সে আমাদের প্রবল জনসমর্থন রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের বন্ধ সফল হবেই।”
সব পক্ষকেই শান্তি বজায় রেখে বন্ধের রাজনীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সবার কাছে আবেদন করেছি। এই মুহূর্তে কোনও ধর্মঘট হলে পাহাড় ও ডুয়ার্সে পর্যটন ব্যবসার ক্ষতি হবে।” |