দখল হয়েছে ব্যস্ততম রাস্তার ফুটপাত। নেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়। যাত্রীদের জন্য শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা। রাস্তা দখল করে চলছে বিকল গাড়ি মেরামতের কাজ। শহর এলাকায় পরিষেবার ওই বেহাল দশার প্রতিবাদে প্রশাসনের ডাকা সভা বয়কট করে আন্দোলনের হুমকি দিল ময়নাগুড়ির বেসরকারি পরিবহণ কর্মীদের চারটি সংগঠনের যৌথ সংগ্রাম কমিটি। সংগঠনের সহকারি সম্পাদক সিরাজ আহমেদ বলেন, “প্রশাসনের কর্তাদের শহরের সমস্যার কথা কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। তাই আলোচনায় না-বসে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হচ্ছে।” রাস্তায় না-দাঁড়িয়ে টার্মিনাস থেকে বাস ছাড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গত বুধবার ব্লক প্রশাসনের কর্তারা সভার আয়োজন করেছিলেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বেসরকারি পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতৃত্বকেও। কিন্তু তাঁরা যোগ না দেওয়ায় ওই সভা ভেস্তে যায়। পরিবহণ কর্মীদের অভিযোগ, রাস্তা ও ফুটপাতের সমস্যার সমাধান না-করে প্রশাসনের তরফে শুধুমাত্র টার্মিনাস নিয়ে বলা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও কয়েক দফায় আলোচনায় পরিষেবার বেহাল দশার কথা জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। তাই তাঁরা নতুন করে একই বিষয়ে আলোচনায় বসতে নারাজ।
যৌথ সংগ্রাম কমিটির সহকারি সম্পাদক বলেন, “শহর ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে বেড়েছে যানবাহন। প্রতিদিন যানজটে পথচারীদের নাকাল হতে হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের প্রত্যেকে টার্মিনাস থেকে বাস ধরবেন ওই ধারণা ঠিক নয়। বরং যাত্রী ও পথচারীদের সুবিধার জন্য উন্নত পরিষেবার পরিকাঠামো তৈরির কথা ভাবতে হবে। সেটাই প্রশাসনের কর্তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না।” যদিও ময়নাগুড়ির বিডিও সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, “পরিবহণ কর্মীদের আলোচনায় বসার জন্য ফের অনুরোধ করব। ওরা যে সমস্ত সমস্যার কথা বলছেন সেটাও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বেসরকারি পরিবহণ কর্মীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ময়নাগুড়ির উপর দিয়ে ডুয়ার্স ও কোচবিহার জেলার বিভিন্ন রুটে অন্তত চারশো ছোটবড় যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে। ময়নাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালবাজার সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা এবং কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ, ধাপরা, মাথাভাঙায় যাতায়াত করে আরও অন্তত একশো ছোটবড় বাস। প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ওই শহরে আসেন। প্রতীক্ষালয় না-থাকায় তাঁদের খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হয়। সকাল ৮টার পর থেকে যানবাহন ও যাত্রীদের ভিড়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ট্রাফির মোড় এলাকায়। যৌথ সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বের অভিযোগ, নতুন বাজার থেকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অফিস, ট্রাফিক মোড় থেকে ওভার ব্রিজ, দুর্গাবাড়ি মোড় থেকে ইন্দিরা মোড় পর্যন্ত শহরের প্রধান তিনটি রাস্তায় ফুটপাত বলে কিছু নেই। সেখানে দোকান, গ্যারেজ গজিয়েছে। রিকশা ও ভ্যান রিকশার দখলে চলে গিয়েছে মালবাজার রোডের বিস্তীর্ণ এলাকা। ট্রাফিক মোড়ে ঘোরাতে গিয়ে বাস দোকানে ঢুকে পড়ছে। ট্রাফিক সংলগ্ন এলাকায় যে তিনটি প্রতীক্ষালয় ছিল সেগুলি উধাও হয়েছে। পানীয় জলের জন্য তৈরি রিজার্ভার ঘিরে এমনভাবে দোকান উঠেছে যে সেটা যাত্রীদের নজরে পড়ে না। পরিবহণ কর্মীদের ওই অভিযোগ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা অস্বীকার করেননি। বিডিও বলেন, “পুলিশ, পরিবহণ কর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সমস্ত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।” |