বুল্টনের মতো দুষ্কৃতীর সঙ্গে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দীর ‘সম্পর্ক’ নিয়ে এক দিন আগে কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রবিবার অমিতাভবাবুর প্রতিক্রিয়া, “উনি সামাজিক বিদ্বেষ থেকে হিংসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। যা এ রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কৃতি-বিরুদ্ধ।”
সিপিএমের সঙ্গে ‘সামাজিক সংস্রব’ না-রাখার জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ইতিমধ্যে একাধিকবার সতর্ক করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। রবিবার তাঁর গলায় একই সুর শোনা গিয়েছে রাজারহাটে। সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘উষ্মা’ প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করে খাদ্যমন্ত্রী শনিবার বলেছিলেন, “এ জেলায় প্রভাস ঢালির মতো দুষ্কৃতীকে চাঁদপাড়ার সিপিএম বিধায়ক মন্মথ রায় এবং বুল্টনের মতো দুষ্কৃতীকে সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দী প্রশ্রয় দিয়েছেন।” তাঁর সংযোজন, “২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে হাবরার প্রার্থী হন অমিতাভবাবু। নির্বাচনের দিন দুপুরে তাঁর উপস্থিতিতে বুথ দখল করতে গিয়েছিল বুল্টন। প্রায় ৫০০ লোক তাকে তাড়া করেছিল।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এ দিন অমিতাভবাবু বলেন, “বুল্টন কী করে, তা আমার জানা নেই। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। সরকার ওদের। পুলিশ রেকর্ড দেখে প্রমাণ করুক বুল্টনের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল কি না।” এর পরেই প্রাক্তন সাংসদ দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু-সহ তৃণমূল নেতাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, “এখন পুলিশ-প্রশাসন গোটাটাই তৃণমূল নিয়ন্ত্রণ করে। বড় বড় সমাজবিরোধীদের ওঁরাই পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে ছাড়িয়ে আনছেন।” তাঁর দাবি, “জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো নেতাদের সঙ্গে, তাঁদের আশপাশে এবং যে কোনও সভায় যাদের ওঠবোস করতে দেখা যায়, তাদের মধ্যে কে কে সমাজবিরোধী আছে, তা জেলার মানুষ জানেন। আমি তালিকা ধরে সমাজবিরোধীদের সম্পর্কে বলব না। তবে, এ কথা বলব যে এই মুহূর্তে যাঁদের সমাজবিরোধী বলা হচ্ছে, তাদের সবাই ওদের (তৃণমূল) সঙ্গে রয়েছে।”
এ দিন খাদ্যমন্ত্রী ফের তাঁর বর্ধমানের পূর্ব খাঁপুর বামুনপাড়ায় বাড়িতে ঢুকতে না-পারার পুরনো অভিযোগ তোলেন সিপিএমের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “আমি ওই গ্রামে যে ঢুকতে পারিনি তা ২০০১, ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। প্রমাণ চাইলে সংবাদমাধ্যমের কাছে তা তুলে দিতে পারি।”
এই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন অমিতাভবাবু। তিনি বলেন, “এ রকম ঘটনা আমাদের জানা নেই। তখন উনি কেন বলেননি? অতীতে সংবাদমাধ্যমে ওই ঘটনার কথা কোথাও পাওয়া যাবে না।”
শুধু অমিতাভবাবুই নন, শনিবার জ্যোতিপ্রিয়বাবু আক্রমণ করেন গাইঘাটার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মন্মথবাবুকেও। এ দিন মন্মথবাবু প্রসঙ্গেও উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “২০০১ সালে আমি যখন গাইঘাটার প্রার্থী হই, তখন বহুদিন এখানকার মানিকহিরা গ্রামে ঢুকতে পারিনি। প্রভাস ঢালি সিপিএমের ঝান্ডা নিয়ে ওই গ্রামে ঘুরত। ওদের মদতদাতা মন্মথ রায় এবং চাঁদপাড়ার সিপিএম নেতা কপিল ঘোষ।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মন্মথবাবুর দাবি, “সম্পর্ক থাকা তো দূরের কথা, কোনও দিন প্রভাস ঢালিকে দেখিইনি। দলের কারও সঙ্গেও ওর সম্পর্ক ছিল না। তৃণমূল রাজনীতিতে নোংরামি করছে। আমি জানি প্রভাস ঢালি তৃণমূলের লোক।” কপিলবাবুও দাবি করেন, “প্রভাস ঢালির নাম শুনলেও দেখিনি কখনও।”
এ দিন কাঁচরাপাড়ায় দলের প্রাক্তন বিধায়কের স্মরণসভায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব আবার বলেন, “তৃণমূলের এক নেতা সমানে আমাদের বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছেন। কী মনে করছেন মানুষ! আমি বা বিমানদা (বসু) প্রতিবাদ করার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলবেন, ওই কথা তাঁর সরকার বা দলের নয়। নেতার ব্যক্তিগত মত। অনেক দলের নেতাই অনেক সময়ে খেই হারিয়ে কথা বলেছেন। আমরা তার নিন্দা করেছি।”
উত্তর ২৪ পরগনায় দুই দলের নেতাদের চাপান-উতোর চললেও নানা জায়গায় অবশ্য ‘সৌহার্দ্যের’ চিত্রও দেখা যাচ্ছে। শনিবারই যেমন দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে শহরের মেয়র সিপিএমের রথীন রায়ের পাশে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক
তথা দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। অনুষ্ঠান চলাকালীন গল্পগুজব ও হাসি-ঠাট্টাও করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। অপূর্ববাবু পরে বলেন, “ওটা কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছিল না। আমন্ত্রিত ছিলাম, তাই গিয়েছিলাম। দেখা হলে সৌজন্যের খাতিরে কথা তো হবেই।” |