ছ’টি শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ করা হবে ২০০ জন ‘গ্রিন পুলিশ’। যানজট মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কাছে গ্রিন পুলিশের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল বলে মুর্শিদাবাদ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, জেলা পুলিশের চাহিদা অনুসারে ২০০ জন গ্রিন পুলিশ নিয়োগের অনুমোদন মিলেছে।
জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বহরমপুর, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান, লালবাগ, কান্দি ও বেলডাঙা এই ছয় শহরের যানজট মোকাবিলায় কাজ করবেন ওই গ্রিন পুলিশ। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির তরফে ওই এলাকায় ২০০ জন ট্রাফিক ওয়ার্ডেন নিয়োগ করা হবে। গ্রিন পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে তারা। এ ছাড়াও থাকবেন স্থানীয় পুলিশকর্মীরা। ইতিমধ্যেই বহরমপুরে একশো জন, জঙ্গিপুরে ৩০ জন এবং ধুলিয়ানে ১২ জন ট্রাফিক ওয়ার্ডেনকে যানজট মোকাবিলায় রাস্তায় নামানো হয়েছে। স্থানীয় পুরসভার তরফে তাঁদের দৈনিক ভাতা দেওয়া হবে বলে পুরসভা তরফে জানানো হয়েছে। |
গত শনিবার রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর শহরের যানজট সমস্যা সরেজমিনে দেখতে পথে নামেন পুলিশ সুপার নিজেই। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পুলিশ কর্তারাও। ছিলেন স্থানীয় বিধায়কেরাও। একই ভাবে গত সপ্তাহে ধুলিয়ানের যানজট-পরিস্থিতির হাল হকিকত দেখতে যান পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সামনের সপ্তাহে লালবাগ, কান্দি ও বেলডাঙায় গিয়ে সেখানকার পুরকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন হুমায়ুন কবীর।
শনিবার পুরপ্রধানকে নিয়ে জঙ্গিপুর ও রঘুনাথগঞ্জ ঘুরে দেখে পুলিশ সুপার বলেন, “উমরপুর থেকেই যানবাহন শহরমুখী হতে শুরু করছে। ফলে সেখান থেকেই যানজট শুরু হচ্ছে। তা ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে মিঞাপুর রেলগেটের কাছে নির্মীয়মান অ্যাপ্রোচ সড়ক বরাবর। সেখানে রেলের স্থানীয় কর্তাদের বলা হয়েছে জবর দখল করা জায়গাগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাধামুক্ত করতে উদ্যোগী হতে। তাতে রাস্তাটি সম্প্রসারিত হবে। একই ভাবে রঘুনাথগঞ্জ ফুলতলা ট্রাফিক গার্ডের আচ্ছাদন ও বাতিস্তম্ভটিও রাস্তার উপর থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। সেখানে একটি ফুট দশেকের ডিভাইডার বসানো হবে। ভেঙে ফেলা হবে ফুলতলা ও সাগরদিঘি বাসস্ট্যান্ডের যাবতীয় অবৈধ নির্মাণও।” পুলিশ সুপার আরও বলেন, “একই ভাবে লালবাগ, কান্দি ও বেলডাঙা পুর কর্তৃপক্ষকেও ওই শহরের উপযোগী কিছু প্রস্তাব দেওয়া হবে। শহর যানজটমুক্ত হলে উপকৃত হবেন সকলেই। শহর জুড়ে প্রচুর গাছ লাগানোর উদ্যোগও হচ্ছে।” কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে ফের বৈঠক হবে ১ মে। ধুলিয়ান পুরসভার উপ পুরপ্রধান কংগ্রেসের দিলীপ সরকার বলেন, “এমনিতেই ধুলিয়ানের যানজট একটা বড় সমস্যা। এর আগে পুলিশের সঙ্গে বহু বার বৈঠক হলেও কোনও ফল হয়নি। এ বার অবশ্য পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করার পরে যানজট সমস্যা বেশ খানিকটা মিটেছে। ১২ জন ওয়ার্ডেন কাজ করছেন। আমি নিজে শহরের বিভিন্ন মোড়ে নজরদারি করছি। এলাকার মূল সমস্যাই হল রাস্তার পাশের অবৈধ নির্মাণ। এ গুলো ভেঙে ফেললে রাস্তা চওড়া হবে। তবে স্থানীয় পুলিশকেও সক্রিয় হতে হবে।” জঙ্গিপুরের সিপিএমের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “যানজট রুখতে যে পরিকল্পনাই নেওয়া হোক, তা যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সামগ্রিক ভাবে একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিধায়কদের বলা হয়েছে আর্থিক সংস্থানের জন্য। কিন্তু এখনও সেভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।” জঙ্গিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মহম্মদ সোহরাব বলেন, “পুলিশ ও পুরসভার এই যৌথ উদ্যোগ খুবই ভাল। কিন্ত বিধায়ক তহবিল থেকে কোনও টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না। পুরকর্তৃপক্ষ তাঁদের পরিকল্পনা জমা দিলে এ নিয়ে আমি রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব।” পুলিশ সুপার বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের জন্য এটা খুবই ভাল খবর।’ |