নিজেই থানায় গিয়ে বিয়ে রুখল কিশোরী
পাত্রপক্ষের পণ পছন্দ হয়নি। সবার সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। তাই বিয়ের মণ্ডপেই দাঁড়িয়ে ডোমকলের সারাংপুরের আজিরন খাতুন বলেছিলেন, তিনি চান বর তাঁকে তালাক দিক। তালাক পেয়েওছিলেন। রেজিনগরের রামনগর-বাছড়ার নাবালিকা রাজনিহার খাতুন বিয়ের কথা শুনে প্রতিবেশীদের সাহায্যে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। বিডিও নিজেই গিয়ে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করতে রাজি করান। সুতির রঘুনাথপুরে নাবালিকা টুম্পা খাতুনও এক শিক্ষিকার পরামর্শে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে পেরেছিল। এ বার সেই মুর্শিদাবাদেরই কান্দির জেমো উমপাড়ার রাজনেহার খাতুন শনিবার ভর সন্ধ্যায় দু’কিলোমিটার হেঁটে সোজা চলে গেল থানায়। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে দেওয়ার চাপ দেওয়ার জন্য সেই নাবালিকা সরাসরি অভিযোগ দায়ের করল তার মা, দিদিমা ও মামার বিরুদ্ধে।
রাজনেহার খাতুন।
নিজস্ব চিত্র।
সেই দিন বিকেলেই তার বাড়িতে বিয়ে নিয়ে আলোচনা চলছিল। পাত্র পছন্দ। বিয়ের দিনও মোটামুটি ঠিক। সেই সব কথাই ভিতরের ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছিল কিশোরী রাজনেহার। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এসে রাজনেহার জানায়, সে পড়াশোনাই করতে চায়। এখনই বিয়েতে সে রাজি নয়। রাজনেহারকে নিয়ে মাত্র এক মাসের মধ্যেই এই পিছিয়ে পড়া জেলার তিন নাবালিকা ও আজিরন এই ভাবে পরিপার্শ্বের চাপের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালেন। জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “এই জেলায় নাবালিকা বিবাহের হার ৬১ শতাংশ। যা উদ্বেগজনক ভাবেই বেশি। আমরা প্রশাসনের তরফে চেষ্টা করছি, সচেতনতা আরও বাড়ানোর জন্য।”
কান্দির রাজনেহারের এই প্রতিবাদ কিন্তু তার বাড়ির লোক সহজে মেনে নিতে চাননি। তবে মা, মামার ধমকেও বিয়ে করতে রাজি হয়নি রামেন্দ্রসুন্দর বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। তাতে ধমক বরং বেড়েই যায়। বাড়ির লোক রাগারাগি করছে দেখে রাজনেহার তখন সোজা হেঁটে চলে যায় শহরের মধ্যেই কান্দি থানাতে। ওই থানার আইসি সুনয়ন বসু বলেন, “মেয়েটি এসে বলে তার ইচ্ছা না থাকলেও তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা তখনই তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করি।” কান্দি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অনমিত্র দাস বলেন, “ওই রাতেই আমরা মেয়েটির মামা মানিক শেখকে গ্রেফতার করেছি। রবিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক মানিক শেখকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। কিশোরীকে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।” অনমিত্রবাবু বলেন, “কিশোরী মা ও দিদিমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে। তবে তাঁদের গ্রেফতার করা যায়নি।”
রাজনেহারের বাবা জামির শেখ কর্মসূত্রে পশ্চিম এশিয়াতে থাকেন। নিম্নবিত্ত এই পরিবারের এই কিশোরীই চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। রাজনেহার এই দিন বলে, “আমি পড়াশোনাই করতে চাই। তা হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু এখন বিয়ে দিয়ে দিলে তা আর হবে না।” ওই কিশোরীর বক্তব্য, “বাড়িতে আমি মা, মামা ও দিদিমাকে সেই কথাটাই বারবার বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু কেউ কোনও কথাই শুনতে চাইছিল না। তাই বাধ্য হয়েই থানায় চলে গিয়েছিলাম।” কিন্তু প্রথমেই থানাতে গেলে কেন? রাজনেহারের জবাব, “আমি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মরিয়া হয়ে তাই ভেবেছিলাম, সোজা পুলিশের কাছেই যাই।” মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “সোমবার ওই কিশোরীর সঙ্গে আমি আলাদা করে কথা বলব। তারপরে মেয়েটি কী চায়, তা জানার পরে সেই মতো সবরকম সহযোগিতা করা হবে।”
ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কথায়, “স্কুলে নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করব।
ওই ছাত্রী অন্য ছাত্রীদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.