গত শুক্রবারই শিলিগুড়ি শহর থেকে টেবল টেনিসে প্রথম অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেলেন অঙ্কিতা দাস। দু’ দিন পর সৌম্যজিৎ ঘোষও। একই শহর থেকে একাধিক অলিম্পিয়ান তৈরির রহস্য কী? রবিবার হংকং থেকে সৌম্যজিৎ ঘোষের সুযোগ পাওয়ার খবর পৌঁছতেই এই প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছে। এই ছোট্ট শহর থেকে ২ জন অলিম্পিকে সুযোগ পেয়ে সকলকেই চমকে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ টেবল টেনিস সংস্থার কর্ণধার তথা টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্মকর্তা মান্তু ঘোষ বলেন, “সাধারণত সিনিয়র জাতীয় দলের অনুশীলন শিবিরে যে প্রশিক্ষণটা হয় শিলিগুড়ির ছেলেমেয়েরা ক্যাডেট বিভাগ থেকেই সেটা পাচ্ছে। অন্যান্যরা কলকাতা, মুম্বই, দিল্লিতে জাতীয়স্তরের ক্যাম্পে যেতে পারলে সেই সুযোগ পান। আধুনিক টেবল টেনিস-টা কী তা গোড়া থেকেই রপ্ত করতে শেখে এই শহরের খেলোয়াড়রা।” তবে এত তাড়াতাড়ি ২ জন অলিম্পিয়ান উঠবে তা অবশ্য ভাবতে পারেননি তিনি। খুশি সে কারণেই। মান্তুর কথায়, খেলার সময় আগে যে ধরনের টেকনিক ব্যবহার করা হত মর্ডান টেবল টেনিসে সেটা বদলেছে। ‘সার্ভিস’, ‘রিসিভিং’ পদ্ধতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শিলিগুড়ির অনূর্ধ্ব ১২ বছরের ছেলেমেয়েরাও সেই খেলাটা শুরু থেকে শিখছে। শহরের অপর টেবল টেনিস কোচ অমিত দাম বলেন, “শুরুতে যে ‘ভিত’ তৈরি হয় সেটাই মূল। এখানকার ছেলেমেয়েদের ভিতটা ভালভাবে তৈরির দিকে আমরা যত্ন দেই। সেটাই অন্যদের সঙ্গে শিলিগুড়ির টেবল টেনিস খেলোয়াড়দের ফারাক গড়ে দেয়।” |
এই শহরে অন্তত ২৫ টি ক্লাবে টেবল টেনিস খেলা, অনুশীলন হয়। বিভিন্ন বিভাগে ১ হাজারেরও বেশি খেলোয়াড় অনুশীলন করেন। শহরের প্রবীণ টেবল টেনিস কোচ ভারতী ঘোষের কথায়, সৌম্যজিৎ, অঙ্কিতারা বাইরে বেশি খেলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সেটা ওদের এগিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া খেলার টেকনিক আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।” শহরের বাসিন্দা তথা টেবল টেনিস খেলোয়াড় অর্জুন শুভজিৎ সাহা মনে করেন ছোট থেকেই পেশাদার টেবল টেনিস খেলছে শিলিগুড়ির খেলোয়াড়রা। দিনভর টেবিল টেনিস নিয়ে মেতে থাকে। অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েদের খেলার দিকটা গুরুত্ব দেন। সেটাই ‘অ্যাডভান্টেজ’। এ দিন খবর পৌঁছতেই হাকিমপাড়ার রাসবাহিরী রোডে সৌম্যজিৎদের বাড়িতে আনন্দে মেতে ওঠেন আত্মীয় পরিজনরা। মিষ্টি মুখ পর্ব চলতে থাকে। রবীন্দ্রনগরে অঙ্কিতার বাবা অসীমকুমার দাসও খবর পেয়ে ফোন করেন। বিকালে দেশবন্ধু ক্লাবে উপস্থিত ছিলেন মান্তু, তাঁর স্বামী তথা টেবল টেনিস কোচ সুব্রত, অঙ্কিতার বাবা, সৌম্যজিতের বাবা। সেখানেও মিষ্টিমুখ চলে। পরিচিতরা দুপুর থেকেই অভিন্দন জানিয়েছেন বাড়িতে ফোন করে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অভিনন্দন জানিয়েছেন। আগামী ২৪ এপ্রিল শহরে ফেরার কথা সৌম্যজিত, অঙ্কিতাদের। বাগডোগরা বিমান বন্দর থেকেই তাদের স্বাগন জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে শিলিগুড়ি। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “শহরের গর্ব ওই দুই খেলোয়াড়। অলিম্পিকে ওরা সফল হোক এই প্রার্থনা করি।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য খেলার ব্যাপারে বরাবরই উৎসাহী। অঙ্কিতারা ফিরলে তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন। |