সঙ্গীর আকস্মিক মৃত্যুর পর থেকেই আর চেনা ছন্দে নেই ময়ূরী। কখনও মনমরা হয়ে ঝিমোচ্ছে। আবার কখনও খাবার এলেও মুখে তা না তুলে একপ্রান্তে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকছে। সারাক্ষণ একাকিত্বের যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটছে ওই প্রানীটির। তাই ময়ূরীকে চিন্তার শেষ নেই বনকর্মী থেকে পদস্থ কর্তাদের অনেকেরই। বিষয়টি জানার পরে ময়ূরীর একাকিত্ব কাটাতে তৎপর হয়েছেন খোদ রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। ফলে আধিকারিকদের মধ্যেও সঙ্গীর বন্দোবস্ত করা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। আপাতত ময়ূরীর আশার আলো সেটাই। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহারের খোলটা ইকো পার্ক চত্বরে তারজালির ঘেরাটোপের মধ্যে বছর দুই আগে পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে একটি ময়ূর ও ময়ূরীকে রাখা হয়। মার্চের শেষ সপ্তাহে দুই বছরের প্রতি মূহূর্তের ওই সঙ্গী ময়ূরটির সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই ময়ূরীটি মনমরা হয়ে পড়ে। পার্কের কর্মীরা খাবার দিলেও অনেক সময় তা মুখেই তুলছে না। গত কয়েকদিন বৃষ্টির সময় সেটিকে আরও বেশি বিষণ্ণ দেখায়। আকাশে মেঘের ডাক শুনে যে সঙ্গীর পেখম তোলা নৃত্যের ছন্দে ময়ূরীকে প্রাণবন্ত দেখাত তার অমন মুখভার অবস্থা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই মনখারাপ পর্যটকদেরও। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন ওই ঘটনার কথা শুনেছেন। |
রসিকবিলে রয়েছে এই ময়ুরীটি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
তারপরেই ময়ূরীর জন্য সঙ্গীর বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। বনমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ওই ময়ূরীর জন্য সঙ্গীর ব্যবস্থা করা হবে।” বন প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্র থেকে ওই ময়ূর-ময়ূরী দুটিকে খোলটায় নিয়ে রাখা হয়েছিল। এবার ময়ূর মারা যাওয়ায় ফের রসিকবিল থেকে আরেকটি ময়ূর সেখানে পাঠানোর কথা ভাবছেন বনকর্তারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বলে তাঁরা ওই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। তার মধ্যেই খোদ বনমন্ত্রীর মনোভাব জানার পর ওই ভাবনা বাস্তাবায়ন সহজ হবে বলে তাঁদের ধারণা। তা ছাড়া রসিকবিলে চারটি ময়ূর ও তিনটি ময়ূরী রয়েছে। বন্যপ্রাণ প্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “এধরনের প্রাণিদের ক্ষেত্রে একমাত্র সঙ্গীর আচমকা মৃত্যু সহ্য করা কঠিন। দ্রুত ওই অভাব মেটানো না হলে সেটির আচরণ আরও অস্বাভাবিক হতে পারে।’’ খোলটা পার্কের এক কর্মী বলেন, “ময়ূরীর যা অবস্থা তাতে বর্ষার সময় ওদের প্রজনন মরসুমে সমস্যা আরও বাড়বে।” কোচবিহারের ডিএফও পিনাকী মিত্র বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই রসিকবিল থেকে খোলটায় একটি ময়ূর পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।” |