রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
মাস দুয়েক আগে হাওড়ার বাগনান-১ ব্লকের বাকসি এবং পশ্চিম মানকুর এলাকায় রূপনারায়ণের পাড়ের ভাঙন মেরামতির কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। কিন্তু তাতেও স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ কমেনি। তাঁদের অভিযোগ, মেরামতির কাজ হচ্ছে ঢিমেতালে।
এর ফলে, বর্ষার মরসুম শুরু হওয়ার আগে কাজ শেষ হবে না বলে তাঁদের আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে, বর্ষার মরসুমে তাঁদের ফের বিপদে পড়তে হবে। এ ছাড়াও, ভাঙনের ফলে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা পুনর্বাসনের দাবিও জানিয়েছেন।
বাকসিহাট থেকে উত্তর দিকে ২৭০ মিটার এবং পশ্চিম মানকুরের দিকে ২৫০ মিটার নদীর পাড়ে ভাঙন মেরামতির কাজ চলছে। দিনের পর দিন ভাঙনের ফলে এই এলাকার বহু জমি তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। নদী দ্রুত এগিয়ে আসছে মূল বাঁধের দিকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১০ বছরে এই এলাকায় ৪০টিরও বেশি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এখন বসবাস করছে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া চালকলের চাতালে। সেখানেই তাঁরা কোনও রকমে অস্থায়ী কুঁড়েঘর বানিয়েছেন। |
তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও কোনও কাজ হয়নি। কাছেই বাকসি টালি কারখানার কাছেও প্রায় ৫০০ ফুট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙন মেরামতির জন্য সেচ দফতর এখনও উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। এখানেও বহু পুকুর, বাড়ি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে।
পশ্চিম মানকুরে নদী বাঁধের গায়েই বাড়ি নেপাল দোয়ারীর। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি ছিল নদীর মাঝখানে এখন যেখান থেকে স্রোত বইছে সেখানে। দশ বছর ধরে এখানে ভাঙন হচ্ছে। আমার বাড়িঘর, জমি সব তলিয়ে গিয়েছে। এখন ভাঙন এগিয়ে আসছে বাঁধের দিকে। ফের আমাদের উঠে যেতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, “বাড়ি ঘর সব তলিয়ে গেল। নদীবাঁধের গায়ে বাস করছি। একটা ত্রিপল পর্যন্ত পেলাম না। মেরামতির কাজও যে রকম ঢিমেতালে হচ্ছে তাতে বর্ষার সময়ে এই বাঁধ রক্ষা করা যাবে কি?”
বাকসি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তাপস মণ্ডল বলেন, “বাকসি এবং পশ্চিম মানকুরে রূপনারায়ণের ভাঙন বহু দিন ধরে হচ্ছে। তবে গত দু’বছরে ভাঙন বেশি করে হচ্ছে। আমি সেচ দফতর এবং আমতার বিধায়ককে সমস্যার কথা বহুবার জানিয়েছি।” আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “যতটুকু অংশে ভাঙন মেরামতির কাজ হচ্ছে তা বর্ষার আগেই শেষ হয়ে যাবে সেচ দফতর আমাকে আশ্বাস দিয়েছে।” ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা করার প্রয়োজন রয়েছে।” সেচ দফতর সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, বর্ষার আগেই যতটুকু অংশে কাজ হচ্ছে, তা মেরামত করা হয়ে যাবে। তবে টালি কারখানার কাছে ভাঙন মেরামতির কাজ কবে শুরু হবে সে বিষয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি সেচ দফতরের কর্তারা। |