নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
কখনও স্মারকলিপি দেওয়া। কখনও অনশন। কখনও বা আইন অমান্য। ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সেই আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে সম্মেলন করল রাজ্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সংগঠন (কুটাব)-এর হুগলি জেলা শাখা। ‘কুটাব’ এর বক্তব্য, আংশিক সময়ের শিক্ষকদের ছাড়া রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ‘পঙ্গু’। অথচ, তাঁদের প্রতিই বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয় নানা ক্ষেত্রে।
রবিবার শ্রীরামপুরের মরাদানে ওই সম্মেলন হয়। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে ১৮টি কলেজে সাড়ে তিনশোর বেশি আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন (রাজ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার)।
সংগঠনটির দাবি, অনেক কলেজেই সুষ্ঠু ভাবে পঠন-পাঠন চালানো থেকে অন্যান্য কাজের ব্যাপারে মূলত এই ধরনের শিক্ষকদের উপরই নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বেতন কাঠামো থেকে প্রাপ্য সম্মান সব ক্ষেত্রেই তাঁরা ‘বঞ্চনা’র শিকার। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে এক হাত নেন এই শিক্ষকেরা। গোটা পরিস্থিতির কথা রাজ্যপাল থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী সকলকেই জানানো হয়েছে সংগঠনের তরফে। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকার অবশ্য তাঁদের দাবি-দাওয়া বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে। |
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের পরে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিগত বামফ্রন্ট সরকার আংশিক সময়ের শিক্ষকদের চাকরিতে ৬০ বছরের স্থায়িত্ব মঞ্জুর করে। সপ্তাহে ১০টি করে ক্লাস বরাদ্দ হয়। সংগঠনের অফিস সম্পাদক মমতা সরকার বলেন, “পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের থেকে দায়িত্ব কোনও অংশে আমরা কম নিই না। ওই শিক্ষকদের মতো আমাদেরও সপ্তাহে ১৮ থেকে ২৪টি ক্লাস নেওয়ার অধিকার দেওয়া হোক। কাজের নিরিখে আমাদের বেতনও যথেষ্ট অসম্মানজনক। কোনও বেতন কাঠামো নেই।” অভিজ্ঞতার নিরিখে ‘সম্মানজনক’ বেতন কাঠামো তৈরির দাবি জানান আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। পাশাপাশি, ‘আংশিক সময়ের শিক্ষক’ বলাতেও আপত্তি রয়েছে তাঁদের। ওই কথাটির পরিবর্তে ‘সহকারী লেকচারার’ পদভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
জেলার বিভিন্ন কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষকরা সম্মেলনে যোগ দেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়েবকুটার রাজ্য এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য মহম্মদ শাহনওয়াজ, মধ্যশিক্ষা শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক পঞ্চানন খাঁ প্রমুখ। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের শিক্ষক শ্রীদাম ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকার আমাদের নিয়ে ছেলেখেলা করছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দিতে চাইছে।” বেতন কাঠামো নিয়ে সরব হন প্রায় সব বক্তাই।
সংগঠনের হুগলি জেলা কমিটির সভাপতি সঞ্চিতা দাস এবং সম্পাদক সম্রাট বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আংশিক সময়ের শিক্ষকদের কারণে-অকারণে ছাটাই করে দেওয়াই ছিল দস্তুর। এই অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে। এই ধরনের এখনও প্রায় ২৫ জন শিক্ষক আছেন। তাঁদের অবিলম্বে পড়ানোর সুযোগ দেওয়া হোক।” সঞ্চিতাদেবীদের অভিযোগ, “কলেজের শিক্ষক সংসদে (টিচার্স কাউন্সিল) এবং পরিচালন সমিতিতে আমাদের সদস্যপদ দেওয়া হয় না। এই ধরনের বৈষম্য অবিলম্বে দূর করা হোক। রাজ্য সরকার উদাসীনতা কাটিয়ে আমাদের প্রতি সুবিচার করুক।” |