যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার!
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে হাওড়া পুরসভারই একটি বসত এলাকায় কোনও রাস্তা নেই। শহরে যাতায়াতের একমাত্র পথ একটি রেললাইন। দক্ষিণ-পূর্ব শাখার অতি ব্যস্ত ওই রেলপথে সারাক্ষণই লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেন চলে। সাঁতরাগাছির কাছে মৌখালি হালদারপাড়া নামে ওই এলাকার শ’দুয়েক পরিবারের হাজারখানেক মানুষের নিত্য যাতায়াত ওই রেলপথ দিয়েই। অভিযোগ, গত ৫০ বছর ধরে পুরসভা-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েও একটি রাস্তা পাননি ওই এলাকার বাসিন্দারা।
কলকাতার দিক থেকে আসার সময়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের গরফা সেতুর বাঁ দিক দিয়ে যে রাস্তাটি চলে গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১২ নম্বর গেটের কাছে, সেটি ধরে গেলেই পড়বে মৌখালি খাল। হাওড়ার অন্যতম প্রধান ওই নিকাশি খাল সরাসরি গিয়ে মিশেছে গঙ্গায়। সেই খালের পূর্ব দিকে আধ কিলোমিটার দূরেই সাঁতরাগাছি স্টেশন। উত্তর দিকে হাওড়া-খড়্গপুর ও হাওড়া-আমতা রেললাইন। ওই রেললাইন দিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে মৌখালি খালের উপরে রেলসেতু পেরিয়ে কিছুটা গেলেই পড়বে হালদারপাড়া। |
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বছর পঞ্চাশ আগে মৌখালি খালের আশপাশের নিচু জমি কিনে ঘরবাড়ি তৈরি করেন শহরে শ্রমিকের কাজ করতে আসা কিছু লোকজন। ধীরে ধীরে তা জনবসতির রূপ নেয়। এক সময়ে যে জমির দাম ১০ হাজার টাকা কাঠা ছিল, এখন তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে কাঠা-পিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, লোকসংখ্যা বা জমির দাম বাড়লেও উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি হালদারপাড়া এলাকায়।
হালদারপাড়ার বাসিন্দা অনুপ জানা বলেন, “অনেক চেষ্টা করে বছর দুই আগে এলাকায় বিদ্যুৎ আনা গিয়েছে। আর এলাকার কাউন্সিলরের কাছে বারবার আবেদন করার পরে এক বছর আগে একটি পানীয় জলের কল বসেছে। এ ছাড়া কিছু হয়নি।”
অনুপবাবু জানান, এলাকার মূল সমস্যা রাস্তা। আর রাস্তা করতে গেলে প্রয়োজন মৌখালি খালের উপরে একটি সেতু। এ ব্যাপারে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিনযোগ তাঁর।
এলাকার বাসিন্দারা চান না বছরের পর বছর আইন ভেঙে এই ভাবে রেলপথের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে। মানসি খাটুয়া নামে এক গৃহবধূ বলেন, “ছোট ছেলে-মেয়েদের অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রেলপথ ধরে মূল রাস্তায় পৌঁছে স্কুলে যেতে হয়। আরপিএফ ধরলে তাঁদের হাতে টাকা গুঁজে দিলে তবে ছাড় পাই। এ ভাবে আর ক’দিন চলবে?”
আর এক বাসিন্দা কবিতা প্রধান বলেন, “আজ পর্যন্ত পুরসভা বা প্রশাসন এক ঝুড়ি মাটি পর্যন্ত ফেলেনি। নিজেরাই মাথায় করে মাটি এনে রাস্তা বানিয়েছি। কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি আমরা।”
এলাকার কংগ্রেস কাউন্সিলর আনোয়ারা বেগম বলেন, “মৌখালি খালের ওপারে যেহেতু রেলের জমি রয়েছে, সেই জমি না পেলে হালদারপাড়ায় সেতু তৈরি করা যাবে না। কারণ, রেলের জমির উপর দিয়েই রাস্তা বানাতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা খুব শীঘ্রই রাজ্য সেচ দফতর ও রেলের সঙ্গে কথা বলব।”
হাওড়া পুরসভার অন্তর্গত বসতি এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এত দিন ওই এলাকার মানুষ পুর-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “এ ব্যাপারে আমি ওই এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব। যদি সত্যিই এ রকম হয়ে থাকে, তা হলে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদকে বিষয়টি দেখতে বলব।”
|