সম্পাদকীয় ২...
প্রশ্রয়ের ফল
বারও মদের ভাটি ভাঙিবার দুঃসাহস দেখাইবার জন্য প্রহৃত হইলেন এক মহিলা। এমনই কদাচার করা হইল কাঁথির গীতা দাসের সঙ্গে যে আত্মহত্যা করিবার চেষ্টা করিলেন তিনি। ইহার পশ্চাতে রাজনৈতিক বিরোধিতাও রহিয়াছে, কিন্তু মদের ভাটি ভাঙিবার আক্রোশ আক্রমণকে আরও তীব্র করিয়াছে। কয়েক মাস পূর্বে সাঁতরাগাছিতে আর এক গৃহবধূ স্থানীয় মদের ভাটিগুলি উঠাইবার জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করিবার জন্য প্রহৃত হইয়া হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছিলেন। এমন কয়েকটি ঘটনা সংবাদের শিরোনামে আসিলেও, মদের ভাটির সহিত নারী নির্যাতনের যোগাযোগ অতি নিবিড়। ভাটিগুলি ঘিরিয়া স্থানীয় দুষ্টচক্র গড়িয়া ওঠে। যে হেতু পুলিশ-প্রশাসনকে তাহারা পূর্বেই যথেষ্ট উৎকোচ দেয়, তাই এই দুষ্টচক্রের সদস্যরা অবাধ মহিলা নিগ্রহের স্বাধীনতা পাইয়া যায়। আবার অন্য ভাবেও মহিলারা বিপর্যস্ত হইয়া পড়েন- ভাটিগুলি অবৈধ মদ সহজলভ্য করিবার ফলে তাঁহাদের স্বামীরা সহজেই নেশাসক্ত হইয়া পড়েন, এবং মদ্যপ অবস্থায় ঘরে ফিরিয়া স্ত্রী-সন্তানদের আক্রমণ করেন। ইহা এ রাজ্যের দরিদ্র নারীর রোজনামচা বলিলে ভুল হয় না। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষাতেও প্রকাশিত হইয়াছে, যে মহিলাদের স্বামী মদ্যপ তাহাদের নির্যাতিত হইবার হার অনেক বেশি। অবৈধ মদের ভাটিগুলি কেবল বিধিভঙ্গের নিদর্শন নহে, এগুলি মেয়েদের জীবনের অভিশাপ। তাহাদের সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক নিগ্রহের কারণ। এ রাজ্যের সকল জেলায়, প্রায় সকল ব্লক এলাকায়, যখনই মেয়েরা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করিয়া সংঘবদ্ধ হইয়াছে, তখনই তাহারা দল বাঁধিয়া গিয়া মদের ভাটি ভাঙিয়াছে। কিন্তু তাহার পর বাহিরে দুষ্কৃতীদের এবং ঘরে স্বামী-পুত্রদের নির্যাতন এমনই মাত্রা ছাড়াইয়াছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা পিছু হঠিতে বাধ্য হইয়াছে।
এখন রাজ্যে প্রশাসনের শীর্ষ স্থানে এক মহিলা রহিয়াছেন, তিনিই পুলিশ মন্ত্রী। তবু পুলিশ-প্রশাসনের কর্মসংস্কৃতিতে পুরুষতন্ত্র বিন্দুমাত্র পিছু হঠে নাই। নিজে বাঁচিবার, সন্তানকে বাঁচাইবার তাগিদে যে বধূ মদের ভাটি ভাঙিবার চেষ্টা করিতেছেন, তাহাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিবার কাজটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া করিতেছেন, পুলিশও নিষ্ক্রিয় থাকিয়া সেই শিক্ষাদানে সহায়তা করিতেছে। শিক্ষা লাভ করিতেছে রাজ্যবাসীও। যেমন, ‘রাজ্য মহিলা কমিশন’ নামক একটি সংস্থা রহিয়াছে, যাহার সদস্যরা রাজকোষ হইতে অর্থ পাইয়া থাকেন, কিন্তু প্রতিবাদী, আক্রান্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়াইবার সময় করিয়া উঠিতে পারেন না। সাঁতরাগাছির মহিলাকে কোনও কমিশন সদস্য হাসপাতালে একবার দেখিতেও যান নাই, কাঁথিতেও কেহ একবার গিয়া দাঁড়ান নাই। অথচ এই মুহূর্তে এই রাজ্যে তৃণমূল স্তরে ‘নারী আন্দোলন’ বলিয়া যদি কিছু থাকে, তবে তাহার একটি প্রধান প্রকাশ মদের ভাটি বিরোধী আন্দোলনে। দুঃখের বিষয়, মূলস্রোতের নারী আন্দোলনও এই মেয়েদের পাশে নাই, তাহাদের ন্যায় বিচার পাইবার প্রচেষ্টায় সহায়তা করিবার কাজটি কেহ কাঁধে তুলিয়া নিতে রাজি নহেন। সংবাদমাধ্যমে দুইটি গরম গরম কথা বলা কঠিন নহে। আক্রান্ত মহিলাকে সাহস জুগাইয়া, সকলকে সম্মিলিত করিয়া প্রতিবাদ করিবার কাজটিই কঠিন। কেহ সেই কষ্টসাধ্য কাজটি করিতে রাজি নহেন। তাই পুলিশ অবাধে অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতেছে, অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করিয়া চরম অপমানিত হইতেছেন মহিলারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.