|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
১৮১৮-য় প্রথম বাংলা সচিত্র পাঁজি |
রবিবাসরীয়তে প্রকাশিত আমার ‘হাতে পাঁজি মঙ্গলবার’ শীর্ষক রচনার উপর চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির (১৬-৪) জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
নিবেদন এই যে, ‘প্রতিমূর্তির সূচি’ আর ‘চিত্র বা প্রতিমূর্তি’ ঠিক এক জিনিস বোঝায় না। ওই ‘সূচি’ অর্থে চিত্র বা প্রতিমূর্তির তালিকা স্বতন্ত্র ভাবে বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থে যোগ করা অভিনব। পাঁজিই রীতিটার পথপ্রদর্শক, ইঙ্গিত সেটুকুই ছিল। একেবারে সালতামামি অনুসারে ১৮৩৫-এর পাঁজিতে প্রথম ‘সূচি’ ছাপা হয়, ১৮৪০ থেকে চন্দ্রোদয় প্রেসের আনুকূল্যে রীতিটা ছড়িয়ে যায়। তথ্যপিপাসুদের কাছে আরও নিবেদন যে, বাংলায় লব্ধ প্রথম মুদ্রিত ও সচিত্র পাঁজির রচক ও প্রকাশক দুর্গাপ্রসাদ বিদ্যালঙ্কার, সাকিন জোড়াসাঁকো, প্রকাশ-সন ১৮১৮। ওই পঞ্জিকাতেই সূর্যগ্রহণের একটি পূর্ণ ছবি ছিল। উপর্যুক্ত পঞ্জিকার সঙ্গে পত্রলেখক উল্লিখিত সন্ডার্স অ্যান্ড কোং-এর পাঁজির কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাপ্তব্য বাংলা পাঁজির মধ্যে ১৮১৮ সালের (পত্রলেখক নির্দেশিত ১৮১৯ সাল আদৌ নয়) দুর্গাপ্রসাদের পাঁজিই প্রথম সচিত্র বাংলা পঞ্জিকা (উনিশ শতকে মুদ্রিত বাংলা পাঁজির প্রকাশন তারিখ সংবলিত তথ্যাবলি, চিত্রালোচনা ও চিত্র নিদর্শনের জন্য দ্রষ্টব্য মৎকৃত ‘ন্যাড়া বটতলায় যায় ক’বার?’ ২০১১, পৃ: ৪০৭-৪২৭)।
|
|
সেই ট্র্যাডিশন। পঞ্জিকা-বিক্রয়। ছবি: উদিত সিংহ। |
উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্র বা হীরালাল কর্মকারের বুলিতে উৎকীর্ণ পাঁচমিশেলি দেশি-বিদেশি সজ্জায় সজ্জিত পাতা-জোড়া কাঠখোদাই প্রতিমূর্তি শোভিত অলংকরণ-রীতির ‘ঐতিহ্য ও ধারা’ আজকের ডি টি পি-তে ছাপা পাঁজির স্ট্যাম্প সাইজ ছবিতে ‘বয়ে চলেছে’ বলে পত্রলেখকের মন্তব্য একেবারে দেখার ভঙ্গির উপরে নির্ভর করে। অন্য দর্শক বিশেষের ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে তারতম্য থাকতেই পারে। আমার রচনায় আমি আজকের পাঁজি সম্পর্কে সেই প্রসঙ্গেই ‘ম্যাড়মেড়ে’ শব্দটি মাত্র ব্যবহার করেছিলাম। সময়প্রবাহে কোনও কিছু পাওয়া বা হারানোর ‘দুঃখ’ বা ‘আনন্দ’-র অর্থে নয়। |
গৌতম ভদ্র। কলকাতা-৩২
|
সত্যান্বেষী এবং সত্যবতী |
ব্যোমকেশের বৌ নয়, স্বতন্ত্র সত্যবতীর খোঁজে’ (২৩-৩) শীর্ষক নিবন্ধ প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা। ১৩৩৯ থেকে ১৩৪৩ পর্যন্ত ব্যোমকেশকে নিয়ে দশটি গল্প লেখার পর দীর্ঘকাল শরদিন্দু সত্যান্বেষীর কথা ভাবেননি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শরদিন্দু বলেছেন, ‘‘আমি ভাবলাম বিয়ে হলে বাঙালীর ছেলের আর পদার্থ থাকে না, তাই ব্যোমকেশকে তখনই রিটায়ার করিয়ে দিয়েছিলাম। ষোল বছর আর লিখিনি।’’ এর পর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘ব্যোমকেশবাবু বিয়ে করলেন কেন? ওঁর মত ক্যারেক্টারের লোকের তো ঠিক সংসারী হওয়া সাজে না।’’
‘কী আর করবে, বেচারা প্রেমে পড়ে গেল।’
‘ওঁর সন্তানাদি কি?’
‘এক ছেলে। একবার একটি বইয়ে তার উল্লেখ আছে। ছেলেকে সাধারণত আমি সামনে আনিনি।’
‘ব্যোমকেশ-সত্যবতীর জীবনে দাম্পত্য কলহ আছে?’
‘তা আর নেই! ‘অদ্বিতীয়’ গল্প তো এই দাম্পত্য কলহ দিয়েই শুরু।’
সত্যান্বেষী মানে জিজ্ঞাসা করায় অজিতকে ব্যোমকেশ বলেছিল, ‘ওটা আমার পরিচয়। ডিটেকটিভ শুনতে ভাল নয়, গোয়েন্দা শব্দটা আরও খারাপ। তাই নিজের খেতাব দিয়েছি সত্যান্বেষী।’ আর এক দিকেও খেতাবটা সার্থক হয়েছিল। ব্যোমকেশ পরে যে মেয়েটিকে বিয়ে করলেন তার নাম সত্যবতী। একটি খুনের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে (‘অর্থমনর্থম’) এক কৃষ্ণাঙ্গীর সঙ্গে ব্যোমকেশের দেখা হয়। মেয়েটির দাদাকে পুলিশ মামলায় ভুল করে জড়িয়েছিল। ‘অর্থমনর্থম’ কাহিনির একেবারে শেষের দিকে অজিত ও ব্যোমকেশের কিছু কথোপকথন
আমি বললাম, ‘সত্য অন্বেষণ তো অনেক দিন থেকেই করছ, কই, এত সাজ-সজ্জা তো কখনো দেখিনি।’
ব্যোমকেশ একটু গম্ভীর হইয়া বলিল, ‘সত্য অন্বেষণ আমি অল্প দিন থেকেই আরম্ভ করেছি।’
‘তার মানে?’
‘তার মানে অতি গভীর। চললুম।’ মুচকি হাসিয়া ব্যোমকেশ দ্বারের দিকে অগ্রসর হইল।
‘সত্যওঃ।’ আমি লাফাইয়া গিয়া তাহার কাঁধ চাপিয়া ধরিলাম ‘সত্যবতী! এ ক’দিন ধরে ঐ মহাসত্যটি অন্বেষণ করা হচ্ছে বুঝি? অ্যাঁ ব্যোমকেশ! শেষে তোমার এই দশা!’ |
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউন, কলকাতা-১৫৬ |
|
|
|
|
|