অপহরণের এক দিন পর, আজ সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির শর্ত পাঠাল মাওবাদীরা।
আগামী ২৫ মে-র মধ্যে আট জেলবন্দি সঙ্গীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা। এরা হল, মারকাম গোপান্না ওরফে সত্যম রেড্ডি, নির্মল আক্কা ওরফে বিজয়লক্ষ্মী, দেবপাল চন্দ্রশেখর রেড্ডি, শান্তিপ্রিয়া রেড্ডি, মীনা চৌধুরী, কোরসা সানি, মারকাম সানি এবং অসিতকুমার সেন। এরা প্রত্যেকেই কট্টর মাওবাদী জঙ্গি এবং বহু হামলা ও খুনে অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাওবাদীরা অবিলম্বে অপারেশন গ্রিন হান্ট-ও অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। সরকারের সঙ্গে এখনও সরাসরি কথা হয়নি মাওবাদীদের। আজ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে অডিও টেপ পাঠিয়ে নিজেদের দাবি পেশ করেছে তারা।
অপহরণ-কাণ্ড সম্পর্কে বহু নতুন তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ছত্তীসগঢ় পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সে সব প্রকাশ করতে রাজি নয় তারা। তবে মেনন ভাল আছেন বলে খবর পেয়েছেন তারা। মেননের মুক্তির ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী হতে আজ ফের এক বার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন স্বামী অগ্নিবেশ। সেই সঙ্গে এই সমস্যার সমাধানে যতটা কম সম্ভব নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে।
মেননকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আজ মাওবাদীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আশা। তিনি জানান, মাত্রই কয়েক মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে এবং তিনি সন্তানসম্ভবা। এই সময়ে মানবিকতার খাতিরে যেন তাঁর স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আশা জানান, “আমার স্বামীর হাঁপানির সমস্যা আছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মাত্রই দু-বারের ওষুধ ওঁর কাছে ছিল। এই ব্যাপারটিও যেন মাওবাদীরা বিবেচনা করে।”
আশা জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলেছেন। কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের সঙ্গেও। কয়েক মাস আগে ওড়িশায় মাওবাদীদের হাতে অপহৃত মালকানগিরির জেলাশাসক ভিনিল কৃষ্ণের সঙ্গেও আজ কথা বলেন আশা। কৃষ্ণ তাঁকে সাহস না হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন আশা। ছত্তিসগঢ়ের আইএএস অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশনও আজ মেননের মুক্তির আবেদন রেখেছে মাওবাদীদের কাছে। একই আবেদন জানিয়েছেন মেননের বাবা এ ভরাদাস এবং শ্বশুর বেণুগোপালও। তাঁদের বক্তব্য, অ্যালেক্স কখনও কারও ক্ষতি করেনি, বরং গ্রামবাসীদের উন্নয়নেরই চেষ্টা করছিল। কেন এমন এক জনকে অপহরণ করল মাওবাদীরা?
মাওবাদী-দমন অভিযানে নিযুক্ত রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি রামনিবাস জানিয়েছেন, মাঝিপাড়া গ্রামে গ্রাম সুরাজ অভিযানে নিযুক্ত অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানা গিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে প্রায় ৫০ জন জঙ্গি গ্রামবাসীদের ভিড়ে মিশে ছিল। তাদের মধ্যে ২০ জনের সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। সভা যখন জমে উঠেছে তখনই আচমকা হামলা চালায় তারা। তাদের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেননের নিরাপত্তারক্ষী কিষাণ কুজুর। সঙ্গে সঙ্গেই গুলি চালান অপর নিরাপত্তারক্ষী আমজাদ খান। তাতে মারা যায় এক মাওবাদী। তার পরই মাওবাদীদের গুলিতে নিহত হন আমজাদ। ছত্তীসগড়ে অধিকাংশ বড় ‘অপারেশন’ যারা করে থাকে, সেই ‘দলম’-এর সদস্যরাই অপহরণ করেছে বলে মনে করছে পুলিশ। আজ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ওই দুই নিরাপত্তারক্ষীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মেননকে অপহরণ করা হতে পারে এমন খবর তাঁরা গোপন সূত্রে পেয়েছিলেন। সে কথা মেননকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমল দেননি। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আগে থেকে কথা না বলে, যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই তিনি গ্রামবাসীদের সভায় চলে যান।
ওড়িশায় অপহৃত বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তির শর্ত নিয়ে মাওবাদীদের অন্তর্দ্বন্দ্বও সামনে এল। মাওবাদীদের শ্রীকাকুলাম-কোরাপুট কমিটির নেতা দয়া আজ এক চিঠিতে সরকারকে জানিয়েছেন, “বিধায়ককে ফেরত পেতে হলে চাষি মূলিয়া আদিবাসী সঙ্ঘের যে সদস্যরা জেলে রয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে মুক্তি দিতে হবে।” সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে বলেই লখিমপুরের বিধায়ক মুক্তি পাচ্ছেন না বলেও জানানো হয়েছে তেলুগু ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে। |