মমতাকে পরোক্ষে কটাক্ষ কৌশলী জেটলির
ব্যঙ্গচিত্র বিতর্কে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
কলকাতায় ব্যঙ্গচিত্র বিতর্কের আঁচ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়লেও কৌশলগত কারণেই এ যাবৎ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি সমালোচনা করেননি বিজেপি নেতারা। কিন্তু আজ পটনায় দলের এক অনুষ্ঠানে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি নাম না করেও এক হাত নেন মমতাকে। জেটলি বলেন, “সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেকে নিয়েও হাসি-মস্করা করা চাই। নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারলে ভুলগুলো বোঝা যায়। কিন্তু যাঁরা একনায়ক, তাঁরা চান না, দুনিয়া তাঁদের নিয়ে হাসুক!”
পটনায় নিজের বক্তব্যে জেটলি একবারও মমতার নাম করেননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ব্যঙ্গচিত্রের প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করে তৃণমূল নেত্রীকেই পরোক্ষে ‘একনায়ক’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল অন্তত প্রকাশ্যে মন্তব্য করার ব্যাপারে এত দিন পর্যন্ত যথেষ্ট সংযমী ছিল। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব যখন মমতার প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েছেন, তখনও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি থেকে দূরত্ব বজায় রাখারই কৌশল নিয়েছেন। এই প্রথম বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মমতার প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব নিলেন।
বিজেপি এখন এনডিএ-র বিস্তারের কথা ভাবছে। মমতাকে ভবিষ্যতে ফের এনডিএ-র ছাতার তলায় আনতে সক্রিয় দলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, শুধু ব্যঙ্গচিত্র বিতর্ক নয়, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে পরপর যে সব ঘটনা ঘটছে, তাতে দেশজুড়ে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এই ধরনের ধারাবাহিক বিতর্ক যখন গোটা দেশে প্রভাব ফেলেছে, তখন কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি চোখ-কান বন্ধ রেখে
চললে তাদের কৌশল নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। আর যে প্রসঙ্গ সরাসরি গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, দল কখনওই সেই বিষয়কে উপেক্ষা করতে পারে না।
এ সবের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় নজরে রাখছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মমতা এখন কেন্দ্রের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। সুদ মকুব নিয়ে কেন্দ্রকে চরমসীমাও দিয়ে রেখেছেন। তা থেকে স্পষ্ট, মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে। কিন্তু সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সর্বোপরি কেন্দ্রের সরকার টিকিয়ে রাখতে কংগ্রেসকে মমতার সঙ্গে সমঝোতার পথে যেতেই হবে। সম্প্রতি মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে বৈঠকে মমতা রাজ্যের জন্য অনেক দাবিই আদায় করে নিয়েছেন। ফলে চাপ বাড়িয়েও মমতা যদি কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথেই হাঁটেন, তা হলে তিনি এনডিএ-তে ফিরতে কতটা আগ্রহী, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তা ছাড়া, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নেই এক সময় তিনি এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন। আরও একটি বিষয় আছে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতাকে সঙ্গে পাওয়ার কথা বিশেষ ভাবছেন না বিজেপি নেতারা। ফলে এখন থেকেই মমতা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে চোখ-কান বন্ধ রেখে চলাটা সঠিক কৌশল নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। বরং মনে করছেন, নরমে-গরমে সম্পর্ক বজায় রাখলে ভবিষ্যতে দর কষাকষি করাটা সহজ হবে।
বিজেপির এক নেতার কথায় অবশ্য ভিন্ন সুরও আসছে। তাঁর মতে, দেশের অর্থনীতি এখন যে পথে এগোচ্ছে, তাকে ফের চাঙ্গা করতে হলে বড় সংস্কার প্রয়োজন। চলতি সপ্তাহেই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, সরকার বিরোধীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে আলোচনা করে এই সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করুক। অরুণ জেটলি থেকে নিতিন গডকড়ী সকলেই প্রকাশ্যে সরকারের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সরকার যদি বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করে এগোতে চায়, তা হলে বিজেপিও ‘দায়িত্বশীল’ বিরোধী হিসেবে পাশে দাঁড়াতে রাজি। কপিল সিব্বল-সহ সরকারের অনেক মন্ত্রীই এই নিয়ে বিজেপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব এটাও মানছেন, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার পথে প্রধান অন্তরায় মমতার মতো ইউপিএ-র শরিক দলের নেতারাই। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে মমতার ‘ইস্যুভিত্তিক’ সমালোচনার পথই সঠিক বলে মনে করছেন দলের একাংশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.