তিন দশক পরে গোবলয়ে নিজেদের এক সময়ের শক্ত ঘাঁটিতেই অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াই চালাতে হচ্ছে বিজেপিকে!
সভাপতি পদের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে আরএসএসের সম্মতি পাওয়ার পরেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন নিতিন গডকড়ী। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়েই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান মিলিয়ে ৭০টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল মাত্র ৮টি আসন! আর উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ১০টি! এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, হরিয়ানায় প্রাপ্তি শূন্য। অথচ আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গোবলয়ের এই রাজ্যগুলিই ছিল বিজেপির বড় ভরসা। এই পরিস্থিতিতে গডকড়ী মনে করছেন, একদা শক্ত ঘাঁটি উত্তর ভারতে যদি ভাল ফল না করা যায়, তা হলে লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির তখ্ত দখল করা কার্যত অসম্ভব। বিজেপি নেতৃত্বের হিসেব, লোকসভায় দুশোর বেশি আসন পেতে হলে এই রাজ্যগুলি থেকে কম করে ৪০-৫০টি আসন পেতেই হবে। আর সে কারণেই এক সময়ের দুর্গ পুনরুদ্ধারের জন্য এখন থেকেই কৌশল রচনার কাজ শুরু করে দিয়েছেন গডকড়ী।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি সভাপতি নিজেই বলেছেন, “যে কোনও মূল্যে আমাদের এই রাজ্যগুলিতে বেশি আসন পেতে হবে। আমাদের লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচনে দুশোর বেশি আসন পাওয়া। বিজেপি যদি ১৭০টির বেশি আসন পেতে পারে, তা হলে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় যে দলগুলি এনডিএ-র সঙ্গে ছিল, তারাও বিজেপির ছত্রছায়ায় আসবে।” বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, লোকসভায় দিল্লির মসনদ দখল করতে হলে গোবলয়ের হারানো জমি আবার ফেরত পেতে হবে। তাঁদের বক্তব্য, সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেসের দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে। সেটিকে এ বারে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তবে শুধু উত্তর ভারত নয়, দেশের অন্য প্রান্তেও আসন বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন গডকড়ী। এই মুহূর্তে বিজেপি বা এনডিএ-শাসিত যে ৯টি রাজ্য রয়েছে, তার মধ্যে গত নির্বাচনে দল সবচেয়ে ভাল ফল করেছিল ছত্তীসগঢ়ে। ১১টি আসনের মধ্যে ১০টি দখল করেছিল বিজেপি। তার পরেই কর্নাটকে। সেখানে ২৮টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল ১৮টি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতে ২৬টি আসনের মধ্যেমাত্র ১৫টি, শিবরাজ সিংহ চৌহানের মধ্যপ্রদেশে ২৯টির মধ্যে ১৬টিআসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে। দেশের ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে গত লোকসভা নির্বাচনে খাতাই খুলতে পারেনি দল। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বের সিংহভাগ রাজ্য-সহ অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা, কেরল, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং-এ বিমল গুরুঙ্গদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনেও একশোর বেশি বিধানসভা আসন দখলের জন্য ‘ব্লু-প্রিন্ট’ রচনা করেছিলেন গডকড়ী। তিন বার ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষাও করিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পর দেখা গেল, আসন বৃদ্ধি তো দূরস্থান, আগের বারের থেকেও কমেছে আসন! বিজেপির একাংশের দাবি, উত্তরপ্রদেশের ফল থেকে শিক্ষা নিতে চান গডকড়ী। উত্তরপ্রদেশে ভোটের সময় গডকড়ী অনেক সিদ্ধান্তই দেরিতে নিয়েছিলেন বলে দলের মধ্যে থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। লোকসভা নির্বাচনে তাই আর কোনও ঝুঁকি নিতে চান না গডকড়ী। সে জন্য এখন থেকেই ‘হোমওয়ার্ক’ করা শুরু করে দিয়েছেন। |