অবিলম্বে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ বন্ধ করুন, সুকমা-র জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির জন্য ২৪ ঘণ্টা বাদে এই শর্তই রাখল মাওবাদীরা। একই সঙ্গে ২৫ তারিখের মধ্যে তাদের আট সহযোগীকে মুক্তি দেওয়ার দাবিও করল তারা। আজ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাজে অডিও টেপের মাধ্যমে যখন নিজেদের এই বার্তা পাঠাচ্ছে মাওবাদীরা, তখন জনপ্রিয় জেলাশাসক মেননের অপহরণের প্রতিবাদে সুকমা-র বন্ধ পালিত হচ্ছে। সেই সর্বাত্মক বন্ধই বুঝিয়ে দিয়েছে, মাওবাদীদের প্রভাব থেকে অনেকাংশেই বেরিয়ে এসেছে ছত্তীসগঢ়ের ওই অঞ্চলটি।
মেননের অপহরণের পিছনে মাওবাদীদের কোন গোষ্ঠীর হাত রয়েছে, আজ তার আন্দাজ পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির কেষণ্ণা, হেরমা, রেঙ্গন, পাপ্পারাওয়ের মতো শীর্ষ নেতারাই এর পিছনে। পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত ওড়িশা-ছত্তীসগঢ় সীমানার তুলসী-হিল এলাকার কোনও গোপন ডেরায় আটকে রাখা হয়েছে মেননকে। জেলা পুলিশের আরও দাবি, মাওবাদী হেফাজতে তিনি অক্ষতই রয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এর থেকে বেশি তথ্য পুলিশ জানাতে রাজি নয়। |
|
|
অ্যালেক্স মেনন ও তাঁর স্ত্রী আশা। ছবি: পিটিআই |
|
মেননের মুক্তির জন্য আজ মাওবাদীদের কাছে আরও একবার আবেদন জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আশা। নিজে সন্তানসম্ভবা, এ কথা জানানোর সঙ্গেই আশা বলেছেন, “আমার স্বামীর হাঁপানির সমস্যা আছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মাত্রই দু-বারের ওষুধ ওঁর কাছে ছিল।
এই ব্যাপারটি যেন মাওবাদীরা বিবেচনা করেন।” রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে জানিয়েছেন জেলাশাসকের স্ত্রী। তাঁর কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সঙ্গেও। কয়েক মাস আগে ওড়িশায় মাওবাদীদের হাতে অপহৃত মালকানগিরির জেলাশাসক ভিনিল কৃষ্ণের সঙ্গেও আজ কথা বলেন আশা। কৃষ্ণ তাঁকে সাহস না হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ছত্তীসগঢ়ের আইএএস অফিসারদের সংগঠনও আজ মেননের মুক্তির আবেদন রেখেছে মাওবাদীদের কাছে। একই আবেদন জানিয়েছেন মেননের বাবা এ ভরাদাস এবং শ্বশুর বেণুগোপাল। তাঁদের বক্তব্য, মেনন কখনও কারও ক্ষতি করেননি। তিনি গ্রামবাসীদের উন্নয়নের চেষ্টাই করছিলেন।
মাওবাদী-দমন অভিযানে নিযুক্ত রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি রামনিবাস জানিয়েছেন, গত কাল অপহরণের সময় গুলি বিনিময়ে নিহত দুই নিরাপত্তারক্ষী কিষাণ কুজু ও আমজাদ খানের শেষকৃত্য আজ আজ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মেননকে অপহরণ করা হতে পারে এমন খবর তাঁরা গোপন সূত্রে পেয়েছিলেন। সে কথা মেননকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমল দেননি। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আগে থেকে কথা না বলে, যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই তিনি গ্রামবাসীদের সভায় চলে যান। অপহরণের সময় দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে এক জন মাওবাদীর মৃত্যু হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এরই মধ্যে ওড়িশায় অপহৃত বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তির শর্ত নিয়ে মাওবাদীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। মাওবাদীদের শ্রীকাকুলাম-কোরাপুট কমিটির নেতা দয়া আজ এক চিঠিতে সরকারকে জানিয়েছেন, “বিধায়ককে ফেরত পেতে হলে চাষি মূলিয়া আদিবাসী সঙ্ঘের যে সদস্যরা জেলে রয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে মুক্তি দিতে হবে।”
সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে বলেই লখিমপুরের বিধায়ক মুক্তি পাচ্ছেন না বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। দয়ার বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই মাওবাদীদের অন্ধ্র-ওড়িশা সীমানা কমিটির মুখপাত্র জগবন্ধুর। এক অডিও টেপ-এ জগবন্ধু জানিয়েছেন, আগামী ২৫ এপ্রিল গণআদালতেই ভাগ্য নির্ধারিত হবে হিকাকার। চাষি মূলিয়া আদিবাসী সঙ্ঘের সদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে কিছুই বলেননি তিনি। বার বার অপহরণের ঘটনার জেরে রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিসার ও রাজনীতিকদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে নবীন পট্টনায়কের সরকার। উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কোথাও যেতে বারণ করা হয়েছে তাঁদের। |