জেএনএনইউআরএম
কিস্তি না দিলে বাস ফেরত নিয়ে চালাবে সরকার
ক দিকে চালানোর ‘খরচ বৃদ্ধি’। অন্য দিকে, ভাড়া বাড়াতে না দেওয়ার ‘জনমোহিনী’ সরকারি নীতি। এ দুইয়ের চাপে পথ থেকে কার্যত উবে গিয়েছে বেসরকারি বিভিন্ন রুটের বহু বাস। অধিকাংশ মালিক বাসের কিস্তি আর দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় চরম ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “কিস্তি দিয়ে বাস চালাতে না-পারলে মালিকেরা বাস ফেরত দিয়ে দিন।” কাল, মঙ্গলবার এ নিয়ে বৈঠক হবে মহাকরণে।
১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর হয় ২০০৮ সালের ১ অগস্ট থেকে। তাতে এক ধাক্কায় কমে যায় প্রচুর বাস। সমস্যা মেটাতে সরকারি তরফে ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর বাস বিক্রি করা হয় মালিকদের। সেই ‘সুন্দরী’ বাস নামতে শুরু করে ২০১০-এর সেপ্টেম্বর থেকে। প্রতিটি বাসের ১৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছিল ৩৫ শতাংশ, রাজ্য ১৫ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ মালিকদের আট বছরে কিস্তিতে দেওয়ার কথা। বিভিন্ন রুটে বরাদ্দ হয় এ রকম ৬২০টি বাস। কিন্তু বছর না ঘুরতেই অধিকাংশ মালিক কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। দফায় দফায় বৈঠকেও এই সমস্যার জট খোলেনি। কিস্তির মোট বকেয়া ছাড়িয়ে গিয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “নতুন সরকার আসার পরে কিস্তির পরিমাণ প্রথমে মাসিক ২২ হাজার থেকে কমিয়ে ১৭ হাজার, পরে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তাতেও মালিকেরা টাকা দিচ্ছেন না।” সমস্যাটা কোথায়? ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স’-এর সাধারণ সম্পাদক সাধন দাসের বক্তব্য, “ভাড়া না-বাড়ালে আমরা কিস্তির টাকা দিতে পারছি না। বাস চালানোও কঠিন হয়ে উঠছে।”
যাত্রী-ভাড়া শেষ বেড়েছিল ২০০৮-এর অগস্ট মাসে। তার পরে ডিজেলের দাম সাত বার বেড়েছে। এ কথা জানিয়ে বাসমালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার ও প্রশাসনকে বিস্তারিত হিসেব কষে দেখানো হয়েছে।” পাশাপাশি, এ ধরনের বাসের যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক বেশি বলে দাবি মালিকদের। কলকাতার বিভিন্ন রুটে ‘সুন্দরী’ বাস বণ্টন করেছে মূলত ‘পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম’ (ডব্লিউবিটিআইডিসি)। কিস্তির টাকা তাদের কাছেই মেটানোর কথা। নিগমের এমডি ধীমান মুখোপাধ্যায় বলেন, “বকেয়া কিস্তির অন্তত ৫০ শতাংশ যাঁরা দিচ্ছেন না, তাঁদের ‘সার্টিফিকেট অব ফিটনেস’ (সিএফ) নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।” তপনবাবু বলেন, “সরকার জানিয়েছিল, সিএফ করাতে গেলে বকেয়া টাকার মধ্যে অন্তত দু’লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা মেটাতে হবে। অনেকের পক্ষেই তা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, বাস চালানো যাচ্ছে না।”
বিভিন্ন রুটে বাস কমে যাওয়ায় যাত্রী-পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার কথা স্বীকার করে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “কিস্তির টাকা দিতে না-পারলে মালিকেরা বাস ফেরত দিয়ে দিন। সরকার বাস চালাবে।” মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তপনবাবু বলেন, “বাস-পিছু মালিকেরা দু’লক্ষ টাকা করে সরকারি বণ্টন সংস্থায় গচ্ছিত রেখেছেন। জোর করে সরকার রাস্তায় বাস নামাতে পারবে না। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে ভাড়া বাড়াতে হবে।” বাসমালিকদের বক্তব্য, প্রতিটি বাসের জন্য যত তেল লাগে, লিটারপিছু দু’টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। ২০১০-এর ১৬ অগস্ট থেকে এই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “বাম-সরকার কী ভাবে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আমাদের জানা নেই। অনেক হয়েছে, আর নয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে সেটা বাসমালিকদের জানিয়ে দেব। যে কোনও মূল্যে রাস্তায় বাস নামিয়ে যথাসম্ভব যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.