অবশেষে অবনমন। শিখরে উঠে সুদের এখন নামার পালা, সুদ সামান্য নামতে পারে এমন আশা কেউ কেউ করছিলেন। সবাই নয়। আশা ছিল নামলে নামবে বড়জোর ২৫ বেসিস পয়েন্ট। যেখানে বাউন্ডারিরও আশা ছিল না, সেখানে আরবিআই গভর্নর ডি সুব্বারাও সবাইকে অবাক করে হাঁকড়েছেন এক ওভার বাউন্ডারি। এক লপ্তে ৫০ বেসিস পয়েন্ট।
|
ডি সুব্বারাও |
ঋণের উপর এক নাগাড়ে সুদ বাড়ায় যাঁরা হাঁসফাঁস করছিলেন তাঁরা যেন সাময়িক হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। অন্য দিকে আমানতের উপর সুদ হ্রাসের খবরে চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে সুদ নির্ভর অসংখ্য মানুষের কপালে। কারণ, সুদ কমতে শুরু করলেও পণ্যমূল্য কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং বাড়তে দেখা যাচ্ছে অনেক জিনিসের দাম। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সুদের অবনমনের পথ খুব একটা সুগম হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এক দিকে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি চলতে থাকা এবং অন্য দিকে ডলারের দাম আবার ৫২ টাকা ছাড়ানোতে সুদ হ্রাসের কারণে শেয়ার বাজারের যতটা উৎফুল্ল হওয়া উচিত ছিল তা কিন্তু হতে পারেনি। সুদ কমার পর সূচক যতটা বেড়েছিল তার অনেকটাই ছিল বিশ্ব বাজার তেজী থাকার কারণে।
রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমায় গৃহ ও গাড়ি ঋণের সুদের হার কমতে শুরু করেছে। এর ফলে ঋণ গ্রহীতাদের যেমন সুবিধা হবে তেমনই উজ্জীবিত হবে এই দুই শিল্প। ঋণ হ্রাসের প্রভাবে বেশ খানিকটা করে দাম বেড়েছে মারুতি, টাটা মোটর-এর হিরো মোটোকর্প শেয়ারের। নির্মাণ এবং গাড়ি শিল্পের উপর নির্ভর করে অন্য বেশ কয়েকটি শিল্প। বাড়ি এবং গাড়ির চাহিদা বাড়লে উপকৃত হবে সিমেন্ট, ইস্পাত, রং, টায়ার, যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, পাখা, আলো, এসি, ফার্নিচার-সহ বহু শিল্প। গৃহঋণ আগাম পরিশোধের ক্ষেত্রে আগে যে জরিমানা ধার্য করা হত, তা এ বার রদ হয়েছে। শিল্পঋণে সুদ কমতে শুরু করায় সুবিধা হবে বড় অঙ্কের ঋণ-নির্ভর কোম্পানিগুলির। কয়েকটি ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে। অন্যেরাও আগামী দিনে তা করবে বলে আশা করা যায়।
সুদ কমতে শুরু করেছে জমার উপরেও। তবে প্রথম দফায় সুদ কমার পরও ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতের উপর সুদের হার এখনও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের তুলনায় বেশি আছে। এই অবনমনের আগে ব্যাঙ্কের সুদ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, বহু মানুষ অনিশ্চিত শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তুলে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত করেছিলেন। সুদ নামতে থাকলে এঁদের অনেকে আবার বাজারে ফিরবেন আশা করা যায়। তবে সুদ অদূর ভবিষ্যতে আরও কমবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। বরং মূল্যবৃদ্ধি যদি আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে, তবে আবারও সুদ বাড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আসলে সুদ হ্রাসের পরিস্থিতি তেমন ভাবে তৈরি না-হলেও, শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর যে-চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তার জেরেই এই সিদ্ধান্ত।
এ দিকে বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের প্রথম ওভারেই দুটি দামি উইকেট খুইয়েছে বাজারে নথিবদ্ধ কোম্পানির দল। প্রথমেই ধরাশায়ী হয় ইনফোসিস এবং তার পর পরই হেভিওয়েট রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এদের মাঝে ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। আকর্ষণীয় ফলাফল প্রকাশ করেছে আইডিবিআই ব্যাঙ্কও। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরের বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। বাজারকে চাঙ্গা রাখতে চাই কয়েকটি আশা জাগানো ফল। চাই বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্য হ্রাস। বিদেশি বাজারগুলিকেও কাঁধ মেলাতে হবে ভারতীয় বাজারকে চাগিয়ে তুলতে। থাকতে হবে অন্ততপক্ষে স্বাভাবিক বর্ষার আভাস। এতগুলি শর্ত অনুকূলে থাকলে তবেই বাজারের উত্থান বজায় থাকবে। না হলে ওঠা-নামা করেই দিন কাটবে। অর্থাৎ উত্থানের মুখে কোনও শেয়ারের ভাল দাম পেলে তা বিক্রি করে আবার পতনের সময়ে তা ধরা যেতে পারে। সামান্য সুদ কমার কারণে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে বড় রকমের কোনও প্রভাব পড়বে না। এখন সবার নজর থাকবে পরের দফায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকে। |