ডিজেল বিনিয়ন্ত্রণের কথা বললেন কৌশিক
দিল্লি পঙ্গু নয়, ফের ‘বার্তা’ দিলেন প্রণব
র্থনীতির প্রয়োজন বনাম রাজনীতির বাধ্যবাধকতা। কৌশিক বসুর সাম্প্রতিক মন্তব্যের ফলে এই নিয়ে নতুন করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা এখনও তাড়া করছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। একাধিক মহল থেকে বারবার প্রশ্ন উঠছে, জোট শরিকদের তুষ্ট রাখতে তা হলে কি সত্যিই সরকারের নীতি নির্ধারণের কাজ পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে পড়েছে? এই বিতর্কের আবহের জবাব দিতে গত কালের মতো আজ আরও এক বার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, নীতি নির্ধারণের কাজ মোটেও থেমে যায়নি। বরং এ বছরের মধ্যেই পেনশন, ব্যাঙ্কিং এবং বিমা নিয়ে আইন পাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। এই তিনটি আইনই সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কৌশিক বসু
প্রণব মুখোপাধ্যায়
প্রণববাবুর মন্ত্রকের আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিকবাবুও এ দিন মুখ খুলেছেন। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও এক বার সংস্কারের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জানিয়েছেন, ডিজেলেরও বিনিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আংশিক বিনিয়ন্ত্রণ হলেও ভাল। তাতে চাপ কমবে রাজকোষে। একই সঙ্গে কৌশিকবাবুর মত, আগামী ছ’মাসের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দেখবে দেশ। সে তালিকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানো এবং খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়াও রয়েছে।
কৌশিকবাবু গত বুধবার এনডাওমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ফর পিস-এ একটি বক্তৃতা দেওয়ার পরে তাই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। ইউপিএ-২ সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই দ্বিধা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার যে অভিযোগ উঠছে, তা-ই আরও এক বার সামনে চলে আসে। সব থেকে বেশি শোরগোল হয় ২০১৪ সালের পরে সংস্কার গতি পাবে বলে তিনি যে মন্তব্য করেন, তা নিয়ে। পরে অবশ্য কৌশিকবাবু ব্যাখ্যা দেন, ভারতে লোকসভা নির্বাচন নয়, ওই বছর ইউরোপে যে আরও একটি আর্থিক মন্দা আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তিনি তার কথা বলেছেন।
কিন্তু শরিকদের মন রাখতে গিয়ে সংস্কার যে আটকে যাচ্ছে, সে কথা কৌশিকবাবু কোনও সময়ই অস্বীকার করেননি। সংস্কারের পথে হাঁটতে গেলে, অর্থাৎ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়া, ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানো, এর সঙ্গে পেনশন, ব্যাঙ্কিং এবং বিমা ক্ষেত্রে সংস্কারের পথ পরিষ্কার করা কোনও ক্ষেত্রেই শরিকদের ছাড়া একক ভাবে এগোনো সম্ভব নয় কংগ্রেসের।
এই পরিস্থিতিতেও কৌশিকবাবু কী ভাবে ডিজেলের আংশিক বিনিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন, সেটাই এখন রাজনীতির কারবারিদের কাছে প্রশ্ন। অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, “হয়তো আংশিক বিনিয়ন্ত্রণ হবে।” সেটা কেমন? কৌশিকবাবুর কথায়, “প্রতি লিটারে কিছু ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হতে পারে। এর ফলে গ্রাহকদের কিছুটা সুরাহা হবে। আবার বিশ্বের বাজারে ডিজেলের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে দেশেও তা উঠবে-নামবে।”
পেট্রোলের দাম এর মধ্যেই বিনিয়ন্ত্রণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী সেই দাম নির্ধারণের দায়িত্ব চার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার, তবু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই সেখানে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতেই হয়। সম্প্রতি যে দু’বার দাম কমাতে হয়েছে পেট্রোলের, তার পিছনেও ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিকের চাপ। একই কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরেও দেশে দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এবং একই কারণে ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয়নি। তা হলে কী ভাবে কৌশিকবাবু এ কথা বলছেন? প্রশাসনের তরফে এই নিয়ে কেউ এ দিন মন্তব্য করেননি। তবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের একাংশ বলছেন, কৌশিকবাবুকে দিয়ে আরও এক বার এই কথা বলিয়ে রাখল সরকার, যাতে বিষয়টা প্রাসঙ্গিক থাকে। তা নিয়ে বিতর্ক হয়। প্রয়োজনে সরকার আবার এটিকে সামনে আনতে পারে। আর একটি অংশের অবশ্য বক্তব্য, কৌশিকবাবু শিক্ষাবিদ। তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা তাঁর নেই। এর আগেও যেমন খোলামেলা কথা বলেছেন, এ বারও তিনি সেটাই করলেন। তাঁদের বক্তব্য, কৌশিকবাবুর আগের মন্তব্যে সরকার যে অস্বস্তিতে পড়েছে, সেটা তো বারবার মনমোহন সিংহ বা প্রণববাবুদের বিবৃতি দেওয়া থেকেই স্পষ্ট। এই অস্বস্তিটা ঘরে-বাইরে। কংগ্রেসের মধ্যে একাংশ কৌশিকবাবুর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে কৌশিকবাবু যা বলেছেন, তার বিরোধিতা করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নেতা বক্তব্য রেখেছেন। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও কৌশিকবাবুর সঙ্গে একমত নন। আর এ বার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীও জানালেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লি মোটেও পঙ্গু হয়ে পড়েনি।
উল্টো দিকে, কৌশিকবাবুর বক্তব্যকে এর মধ্যেই হাতিয়ার করে সরকারের সমালোচনায় নেমেছে বিজেপি। শরিকরা এখনও কিছু না বললেও পরে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যে আবার বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ।
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, আগামী মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন ফের শুরু হতে চলেছে। এই অবস্থায় কৌশিকবাবুর কথা নিয়ে যে শোরগোল উঠেছে, তাতে কংগ্রেস প্রমাদ গুনছে। কারণ, সিদ্ধান্তহীনতা প্রসঙ্গে বিজেপি-সহ বিরোধীদের একটা বড় অংশ সরকারকে নতুন করে চেপে ধরতে পারে। বস্তুত, বিজেপির তরফে এর মধ্যেই বলা হয়েছে, কৌশিকবাবু তো সারসত্যটাই বলে দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সংস্কারের কাজেই এক পাও এগোতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে কাল এক বার ওয়াশিংটন সফররত প্রণববাবু এবং দেশে মনমোহন সিংহ মুখ খোলেন। প্রধানমন্ত্রী মূলত আমলাদের চাঙ্গা করতে বলেন, নির্ভয়ে কাজ করে যান। আজ প্রণববাবু ফের বলেন, এই জোট সরকারই বড় আর্থিক বৃদ্ধির পথে দেশকে নিয়ে যাবে। তাঁর বক্তব্য, “নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশ মোটেও পঙ্গু হয়ে পড়েনি।” সংস্কার প্রক্রিয়া যে চলছে, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি জানান, উৎপাদন ক্ষেত্রে খুব সম্প্রতি নতুন নীতি নেওয়া হয়েছে। সেই নীতি মেনে কাজও শুরু হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি মতো পরিকাঠামোয় ডেট ফান্ড বা ঋণ তহবিল তৈরি হয়েছে।
কিন্তু ভর্তুকি কমানো, ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ বা অন্য সংস্কার? এই কাজগুলো যে প্রয়োজন, সেটা কৌশিকবাবুর মতো মেনে নিয়েছেন প্রণববাবুও। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখে সে পথে কি হাঁটা সম্ভব? এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে গিয়েছে খুচরোয় বিদেশি লগ্নির প্রবেশ। আটকে পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি (কৌশিকবাবু এ দিনও বলেছেন, জিএসটি হল সংস্কারের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় পদক্ষেপ)। শরিক ও বিরোধীদের চাপে আটকে ব্যাঙ্ক, পেনশন ও বিমা সংস্কারও। এখন প্রণববাবু বলছেন ঠিকই যে এই তিনটি বিল এ বছরই পাশ করবে সরকার, সেটা কি সম্ভব হবে? সরকার পঙ্গু হয়ে পড়েছে কি না, তা নির্ভর করছে এর জবাবের উপরেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.