সিউড়ি ও রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় রবিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে ১০টির মতো বাড়ি। তার মধ্যে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় ৬টি বসতবাড়ি পুড়েছে।
একই দিনে একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগলেও আগুন নেভানো তো দূরের কথা, সিউড়ি দমকলকর্মীরা সব জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ সিউড়ি দমকলকেন্দ্রে প্রথম খবর আসে মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটায় আগুন লেগেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সদাইপুর থানা এলাকার কালোসোনা গ্রামের বাউড়ি পাড়ায় আগুন লাগার খবর আসে। ততক্ষণে ভাঁড়কাটার বাসিন্দারা নিজেরাই আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। মাঝ পথে দমকলের গাড়ি কালোসোনা গ্রামে যায়। সেখানে তিনটি পরিবারের চারটি বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ আরও দু-একটি বাড়ি। |
প্রথমে বাউড়ি পাড়ার বাসিন্দারা ও পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বাঁচানো যায়নি বাড়িগুলিকে। পাশাপাশি চাল-ধান, টাকা-পয়সা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাউড়ি পাড়ায় যেহেতু শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি তাই অধিকংশ মহিলা, পুরুষ সকাল ৮টার মধ্যে কাজে চলে যান। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। বাড়িতে বা আশপাশে ছিলেন দু-চারজন মহিলা, পুরুষ ও শিশু। সকাল ১০ নাগাদ প্রথম আগুন লাগে সীতারাম দলুইদের রান্নাঘরে। কাঠের উনুনে ভাতের জল চাপিয়ে পাড়ার দোকানে চাল কিনতে গিয়েছিল ওই পরিবারের এক কিশোরী রুমি দলুই। রুমির কথায়, “আমি চাল কিনে বাড়িতে ফিরে দেখি রান্নাঘরটি জ্বলছে। আমার চিৎকারে গ্রামের মানুষ ছুটে আসেন। দেখতে দেখতে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পর পর বাড়িগুলিতে।” ভারতী দলুই, মদন দলুই, শেফালি দলুইরা বলেন, “কিছু বাঁচেনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু পরনের কাপড়টুকু বেঁচেছে।” তাঁদের ক্ষোভ, কাছে পুকুরে পর্যাপ্ত জল না থাকায় আগুন আয়ত্বে আনতে অসুবিধা হয়েছে। তা ছাড়া দমকল দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। না হলে দু-একটি বাড়ি ও কিছু মালপত্র বাঁচানো যেত।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ততক্ষনে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। চারদিকে কান্নার আওযাজ আর পোড়া গন্ধ। আবার কেউ কেউ যদি অবশিষ্ট থাকে জল কাদায় মাখামাখি হওয়া সবকিছুর দগ্ধাবশেষের মধ্যে তার সন্ধান চালাচ্ছেন। দুবরাজপুরের বিডিও গেবিন্দ দত্ত বলেন, “আগুন লাগার কথা জেনেছি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির কাছে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।” |
সদাইপুরে আগুন নেভাতে না নেভাতেই দুপুর ১২টা নাগাদ খবর আসে সিউড়ির তাপাইপুর গ্রামে আগুন লেগেছে। ওই গ্রামে রাম গোপাল হেমব্রম ও তালা মুর্মু নামে দু’জনের বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। এই গ্রামে ৩০-৪০ মিনিট পরে দমকল পৌঁছলেও কাঁকরতলার ইসলামপুর ও দুবরাজপুরের যশপুর-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় দমকল পৌঁছতে পারেনি। সিউড়ি (সদর) মহকুমাশাসক চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “অনেকগুলি আগুন লাগার খবর পেয়েছি।
অন্য দিকে, রাস্তা বেহালের কারণে রামপুরহাট থেকে সময় মতো দমকল মুরারই থানার মিত্রপুর এলাকায় পৌঁছতে পারেনি। ওই এলাকায় এ দিন সকালে ৪টি বাড়িতে আগুন লাগে। দমকল পৌঁছনোর আগে বাসিন্দারা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ দিনই রামপুরহাটের জোয়ালডাঙা এলাকায় একটি আদিবাসী বাড়ি, মাড়গ্রামের একডালা গ্রামে একটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে গোয়ালঘরে পরে বসতবাড়িতে আগুন লাগে। সেখানে একটি গরুর মারা গিয়েছে। এ ছাড়া, ভোরের দিকে ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুর এলাকায় একটি চালকলে আগুন লাগে। দমকলের কর্মীরা পৌঁছে আগুন নেভায়। |