ফের ভাঙনের ভ্রূকুটি অগ্রদ্বীপে। চার বছর পরে। আশঙ্কায় স্থানীয় মানুষ।
অগ্রদ্বীপের নতুন ঘোষপাড়া থেকে খেয়াঘাট অবধি এলাকা এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহস্পতিবার থেকে রবিবারএই চার দিনে ভাগীরথীর ভাঙনে ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে কয়েকশো বিঘা জমি। অনেকের সদর দরজা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে আছড়ে পড়ছে ভাগীরথী। স্থানীয় নিখিল ঘোষ, বাবু ঘোষরা বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে আমাদের বোরো ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছে।” অগ্রদ্বীর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায় বলেন, “৭০ ঘর বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন।”
শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যান কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত প্রধানকে নিয়ে ভাঙন দেখে এসেছি। সোমবার সেচমন্ত্রীকে ওই ভাঙন রোধের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।” সেচ দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার গঙ্গাধর দে বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তারপর যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” যদিও স্থানীয় বিডিও নির্মলকুমার দাসের দাবি, অগ্রদ্বীপের ভাঙন নিয়ে আগেই সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। |
সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার এক বহুজাতিক সংস্থাকে ভাগীরথীর ভাঙন রোধ করার দায়িত্ব দিয়েছিল। ‘জিও টেক্সটাইল’ পদ্ধতিতে তারা ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করেছিল। তারা দাবি করে, ওই পদ্ধতিতে আমাজনের ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ওই পদ্ধতিতে ভাঙন রোধ করতে পারেনি সংস্থা। সেই সময়ে তারা জানায়, অগ্রদ্বীপের মাটির চরিত্রের জন্যই ওই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। বাধ্য হয়ে সেচ দফতর ‘দেশি পদ্ধতি’তে বাঁশের খাঁচা ফেলে ভাঙন রোধে সচেষ্ট হয়।
সেচ দফতরের কিছু কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর চারেক আগে এক দিকে যখন অগ্রদ্বীপ গ্রামের একাংশ ভাঙছে, তখন উল্টো দিকে চর তৈরি হচ্ছিল। ওই চর জেগে ওঠার পরে পশ্চিম পাড়ের চরবিষ্ণুপুর ভাঙনের কবলে পড়ে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে, ২০১০ সালে জেলা পরিষদ চরবিষ্ণুপুর গ্রামকে পুনর্বাসন দিতে বাধ্য হয়। অন্য দিকে, অগ্রদ্বীপের ভাঙনগ্রস্ত এলাকায় ধীরে ধীরে পলি জমতে থাকায় ফের ভাঙনের আশঙ্কা দূর হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন অগ্রদ্বীপ বুঝি ‘শাপমুক্ত’ হল।
কিন্তু ফের ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীরা সঙ্কটে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ ঘোষ, গৌতম ঘোষরা বলেন, “ভাঙনের জন্য আমরা আমাদের পুরনো জায়গা ছেড়ে পালিয়ে এসে নতুন জায়গায় ঘর বেঁধেছিলাম। বৃহস্পতিবার থেকে আচমকা সেখানেও ভাঙন শুরু হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের অগষ্ট মাসে বেথুয়াডহরি-অগ্রদ্বীপ রাজ্য সড়ক ভাগীরথীতে তলিয়ে যাওয়ার পরেই অগ্রদ্বীপ প্রথম ‘ভাঙন-প্রবণ’ এলাকা বলে চিহ্নিত হয়। সেই সময়ে টানা তিন বছর ভাঙন রোধের সবরকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সেচ দফতর। কিন্তু তার মধ্যেই ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে অগ্রদ্বীপের কয়েকশো একর জমি, কয়েকশো বাড়ি। সেই সময়ে ঘোষপাড়ার ১৮৫ ঘর বাসিন্দা নিজেদের জমি জায়গা ছেড়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাঁধও এখন বিপন্ন। অগ্রদ্বীপের তৃণমূল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অর্চনা বাগ বলেন, “ভাঙনের জ্বালায় পালিয়ে এসে বাঁধের উপরে বাস করছে ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা। আর মাত্র ১০০ মিটার গেলেই ভাঙনের মুখে পড়বে বাঁধ।” |