আশ্বাসই সার, গরমের শুরুতে জলসঙ্কট তীব্র
কই ছবি এই গরমেও।
পানীয় জলের জন্য তীব্র হাহাকার থেকে এ বারও রেহাই পেলেন না আসানসোল পুর এলাকার বাসিন্দারা। সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে গ্রীষ্মের একেবারে গোড়াতেই। দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলের সমস্যা। অবস্থা সামলাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে পুরসভা আর নাভিশ্বাস উঠছে বাসিন্দাদের।
জলের দাবিতে রোজই চলছে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ। সমস্যা মেটানোর আশ্বাসে পরিস্থিতি সাময়িক ঠাণ্ডা হলেও সমস্যার স্থায়ী কোনও সমাধান মিলছে না। ছাই চাপা আগুনের মতো ফের বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ আছড়ে পড়ছে শহর জুড়ে।
অথচ, গত ৬ বছর ধরে আসানসোলবাসীকে সুদিনের স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছে পুরসভা। তৈরি হচ্ছে ১০০ কোটির জলপ্রকল্প। ২০০৬-এ যা হাতে নেওয়া হয়। আসানসোলের ৫০টি ওয়ার্ডেই এখান থেকে জল সরবরাহ হওয়ার কথা। ঠিক হয়েছে দামোদরে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তোলা হবে। পাম্পিং স্টেশন, পাম্প, ১৩টি নতুন জলাধার সবই প্রস্তুত। কেবল কালাঝড়িয়া পাম্পিং স্টেশন থেকে জলাধারগুলিতে জল তোলার পাইপ লাইন বসানোর কাজটাই হয়নি।
কেন? এডিডিএর চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের মেয়র, বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পাইপগুলি ইস্কো এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলের জমির উপর দিয়ে বিছানো হবে। এই দুই সংস্থার কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি এলেই শুরু হবে কাজ।
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য রবিউল ইসলাম নিজেই স্বীকার করেছেন, পুর এলাকার বাসিন্দারা তীব্র জল সঙ্কটে ভুগছেন। বিশেষ করে রেল পাড় এলাকার পাঁচটি ওয়ার্ড, মহীশিলা, রাধানগর, নরসিংহ বাঁধ, শ্যামবাঁধ, সূর্যনগর এলাকার বাসিন্দাদের কার্যত নির্জলা থাকতে হচ্ছে প্রতি দিন।
আসানসোলের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিচু পাড়ার প্রায় আড়াইশো বাসিন্দা মার্চ মাসে পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়ে জানান, পানীয় জলের সমস্যা তাঁদের প্রায় তিরিশ বছরের। ২ কিলোমিটার পথ উজিয়ে নিমতলা এলাকা থেকে বাসিন্দাদের রোজ জল বয়ে আনতে হয়। এলাকার এক বাসিন্দা রীমা দাস বলেন,“রাত জেগে জল আনতে হয়। তবুও প্রয়োজন মতো জল পাই না। সবাই জানেন এই সমস্যার কথা। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে না।”
আসানসোলের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেব পাড়া, সূর্যসেন পার্ক এলাকার বাসিন্দারা জলসঙ্কটে ভুগছেন। একই হাল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি নগর, ইসমাইল এলাকাতেও। এই অঞ্চলের ষষ্ঠীনগর এলাকার এক বাসিন্দা বাসুদেব দাস বলেন, “পানীয় জলের পর্যাপ্ত কল নেই। গভীর নলকূপ নেই। কুয়োর জল শুকিয়ে কাঠ। এক বালতি পানীয় জল জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছি।”
পুরসভার ৪৮ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝামাঝি এলাকা ছোট দিঘারি, বিপিএল কলোনির প্রায় ২৭৬টি পরিবার জল সঙ্কটে ভুগছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভদ্রপাড়া, ধ্রুবডাঙা অঞ্চলেও জলের সমস্যা আছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। আসানসোলের কল্যাণপুর আবাসন এলাকার বাসিন্দারা পুরসভায় অভিযোগ করেন, পাইপ লাইনের মাধ্যমে যে জল সরবরাহ করা হয় তা খুবই অনিয়মিত এবং পরিমাণেও অত্যন্ত কম। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নুরানি মসজিদ এলাকার বাসিন্দারা এই সমস্যা নিয়ে পুরসভায় একাধিক বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। পুরসভায় ৫০টি ওয়ার্ডের প্রায় সবক’টিতেই কোথাও না কোথাও পানীয় জলের সমস্যা আছে। কোথাও পুরসভার পাইপ লাইন নেই। কোথাও পাইপ লাইন থাকলেও অত্যন্ত কম ও অনিয়মিত জল পড়ে। গভীর নলকূপের ব্যবস্থা নেই। দিনে গড়ে চার বালতির বেশি জল পান না বাসিন্দারা।
এই সমস্যার কথা জানেন রবিউল ইসলাম। জলের দাবিতে স্মারকলিপি, বিক্ষোভ, অবস্থান হলেও তিনি কার্যত হাত গুটিয়ে বসে। কী ভাবে পানীয় জলের স্থায়ী সমাধান হবে?
রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, যে সব অঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা আছে সেখানে পুরসভার ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “নতুন জল প্রকল্পটি শেষ না হলে পুরবাসীকে স্থায়ী কোনও সমাধান দেওয়া যাবে না।” কবে শেষ হবে নতুন জল প্রকল্প? রবিউলের আশ্বাস, “আগামী গ্রীষ্মের আগে শেষ হতে পারে। তবে বিষয়টি এখন পুরোপুরি এডিডিএ-র হাতে। কারণ প্রকল্পটি তারাই বানাচ্ছে।”
এখন পাইপ লাইন বসানোর জন্য অনুমতি পত্র আদায় করে কবে কাজ শুরু হয় আর কবেই বা তা শেষ হয়, সেটাই দেখার।

২২ এপ্রিল
১৭ এপ্রিল
৯ এপ্রিল
৪ এপ্রিল
৩০ মার্চ
২৮ মার্চ
২৭ মার্চ
২৩ মার্চ
২২ মার্চ
২০ মার্চ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.