কাজ হয়েছে, তবে ঘুণে ভরা
ংক্রিটের রাস্তা আছে। রয়েছে নর্দমা। পানীয় জলও পৌঁছে গিয়েছে ওয়ার্ডের সর্বত্র। তাই আর পাঁচটা ওয়ার্ডে যখন শুধু ‘নেই নেই’ রব, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সেই ধ্বনি তুলছেন না। তবে তাঁরা ব্যস্ত পুরসভার কাজের গুণ বিচারে। রাস্তা ক্ষয়ে গিয়েছে, জলের ধারা বেশ সরু, আবর্জনা নিয়মিত সাফ হচ্ছে না। পুরভোটের আগে কাউন্সিলরের কাছে এ সবেরই জবাব চাইছেন বাসিন্দারা।
কুড়ুরিয়া গ্রাম, মিলন পল্লি, প্রমোদ নগর, উদয় নগর, গল্ফ নগর, সবুজ নগর, জে-ব্লক নিয়ে দুর্গাপুরের এই ১১ নম্বর ওয়ার্ড। প্রধান রাস্তা থেকে অলি-গলি, সবই কংক্রিটের। মিলনপল্লির ডি-ব্লকে সেই রাস্তা পাথর উঠে ভয়ঙ্কর। এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ গুছাইত, সুনির্মল সরকারেরা বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই রাস্তার এমন অবস্থা।” কিছু বাসিন্দার অবশ্য অভিযোগ, সিমেন্ট কম দিয়ে বেশি করে বালি মিশিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। তাই কিছু দিনের মধ্যে ভেঙে গিয়েছে।” সিপিএম কাউন্সিলর স্বপন দাস অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি পাল্টা বলেন, “নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তাটি ব্যবহার করতে শুরু করেন বাসিন্দারা। তাই এমন হাল। কংক্রিট জমাট বাঁধারও সময় পায়নি।” কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে কয়েক ফুট দূরে প্রধান রাস্তার ধারে রাখা পুরসভার ডাস্টবিন। কিন্তু আবর্জনা ছড়িয়ে আছে তার পাশে। বাসিন্দারা জানান, পুরসভার গাড়ি নিয়মিত আসে না। ফলে আবর্জনা জমে যায়। দুগর্ন্ধ ছড়ায়।
১১ নম্বর ওয়ার্ডে বেহাল রাস্তা। ১২ নম্বরে ছড়িয়ে রয়েছে জঞ্জাল।
শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা পাকা রাস্তা পেরিয়ে পুরসভার প্রান্তে কুড়ুরিয়া গ্রাম। ওয়ার্ডের অন্যত্র নর্দমা সাফ থাকলেও এই এলাকায় ঘিঞ্জি রাস্তার দু’পাশে অপরিসর নর্দমা মজে গিয়েছে। সদগোপ পাড়ায় রাস্তার ধারে বিক্রেতার কাছ থেকে মাছ কিনছিলেন প্রবীণা ভারতী পাল। তিনি জানালেন, পানীয় জলের তেমন সঙ্কট নেই। তবে হাজরাপাড়ার নমিতা হাজরা বলেন, “পাইপ দিয়ে জল প্রায় পড়েই না। বাধ্য হয়ে বেশ কিছুটা দূরে একটি ক্লাব থেকে জল আনি।”
তৃণমূলের ২ নম্বর ব্লক সাধারণ সম্পাদক রাজা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এলাকায় কয়েকটি পুরনো পুকুর আছে। দিন দিন মজে যাচ্ছে। সেগুলির সংস্কার জরুরি।” তাঁর আরও অভিযোগ, জলের সমস্যা মেটাতে পুরসভা কিছু করছে না। কাউন্সিলর স্বপনবাবু জানান, লিঙ্ক রোডের ধারে জলাধার তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই বাড়ি-বাড়ি জল পৌঁছে যাবে।
১১ নম্বর ওয়ার্ডের পাশেই কাণ্ডেশ্বর, আমরাই, উত্তরায়ন, ইন্দ্রপ্রস্থ, পূর্বাঞ্চল, নীলডাঙা, দুর্গানগর, শ্রীনিকেতন, সারদানগর নিয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এক কালে পুরসভার বিরোধী নেতার বাড়ি ছিল এই ওয়ার্ডের আমরাইয়ে। এখন সেখান থেকেই ডেপুটি মেয়র হয়েছেন তিনি।
জাতীয় সড়কে যেতে হলে এখানকার বাসিন্দাদের তামলা নালা পেরিয়ে যেতে হয়। ব্রিটিশ আমলে এই নালার উপরে ভাসাপুল গড়া হয়েছিল। বর্ষায় জল যেত পুলের উপর দিয়ে। ফলে সেই সময়ে যাতায়াত করতে দুর্ভোগ পোহাতে হত। ১৯৯৭ সালের প্রথম পুরসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ড থেকে থেকে জয়ী হন আমরাইয়ের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রিয়নাথ চট্টোপাধ্যায়। পুরসভায় বিরোধী দলনেতা হন তিনি। মেয়রের কাছে তিনি দাবি জানান, দ্রুত ভাসাপুলের জায়গায় কংক্রিটের সেতু বানিয়ে দিতে হবে। অবশেষে ২০০১ সালে সেখানে সেতু নির্মাণ হয়। প্রিয়নাথবাবু বলেন, “বর্তমানে এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা বেহাল পরিবহণ ব্যবস্থা। মিনিবাস কম চলে। অটো প্রায় চলেই না। পুরসভা উদ্যোগী হলে আমরা বাস বা অটো চলাচলে সুবিধার জন্য বাইপাস রাস্তার ব্যবস্থা করে দেব।”
কুড়ুরিয়া থেকে আমরাই যাওয়ার পথে পড়ে সারদানগর। পিচের রাস্তা। তবে মাঝে ভাঙা কালভার্ট। ডেপুটি মেয়রের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে বর্জ্য জমার নির্দিষ্ট জায়গা। বাসিন্দাদের দাবি, ওই জায়গার পরিবর্তে একটি নিচু এলাকায় আবর্জনা জমার ব্যবস্থা করা হোক। রাস্তার দু’পাশে পর্যাপ্ত নর্দমা না থাকায় নিকাশি ব্যবস্থাও বেহাল বলে অভিযোগ।
ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান অবশ্য বলেন, “ছ’হাজার মিটার নর্দমা, আট হাজার মিটার কংক্রিটের রাস্তা, কবরস্থান, খেলার মাঠে সীমানা পাঁচিল, রাস্তা ও শ্মশানে আলোর ব্যবস্থা, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাকা বাড়ি, বিএসইউপি প্রকল্পে দুঃস্থদের জন্য চারশো পাকাবাড়ি নির্মাণ হয়েছে।” মাঝপথে থামিয়ে না দিলে তালিকা আরও দীর্ঘতর হত। বাসিন্দারা কি সন্তুষ্ট? পুরভোটে ফল কি হবে? প্রবীণ সিপিএম নেতার সংক্ষিপ্ত উত্তর, “দেখা যাক।”

নজরে নগর
ওয়ার্ড ১১ ওয়ার্ড ১২
• কুড়ুরিয়া গ্রামে হাজরা পাড়ায় জলের সঙ্কট
• বর্জ্য নিয়মিত সাফাই হয় না
• কংক্রিটের রাস্তা তৈরিতে নিম্ন
মানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
• পরিবহণ ব্যবস্থা বেহাল
• বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্জ্য
জমে থাকে রাস্তার ধারে
• পর্যাপ্ত নর্দমা নেই।

পাইপলাইনের কাজ শেষ
হলেই জল পৌঁছে যাবে ঘরে ঘরে।
স্বপন দাস,

অভিযোগ থাকতেই পারে।
এক বারে সব কাজ করা সম্ভব নয়।
শেখ সুলতান,

জলের সমস্যা মেটাতে পুরসভা কিছু করছে না।
রাজা চট্টোপাধ্যায়, (২ নম্বর ব্লক তৃণমূল)

মিনিবাস কম চলে। অটো প্রায় চলেই না।
প্রিয়নাথ চট্টোপাধ্যায়,
(কংগ্রেস)

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.