অযোধ্যা পাহাড় ‘নিরাপদ’ নয়। এমনটাই মনে করছেন ট্রেকারদের একাংশ। তাই আযোধ্যা পাহাড়ের বদলে ট্রেকারদের ঢল নেমেছে জয়চণ্ডী পাহাড়ে। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই রঘুনাথপুরের উপকণ্ঠে এই পাহাড়ে ভিড় জমিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার পর্বতারোহীরা।
পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড় বরাবরই পর্বতারোহণের জন্য শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে অযোধ্যাই ছিল ট্রেকারদের অন্যতম গন্তব্য। কিন্তু পরবর্তী কালে মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় অযোধ্যা পাহাড় ব্রাত্য হয়েছে পর্বতারোহীদের কাছে। বিশেষ করে গত বছর লক্ষ্মীপুজোর রাতে অযোধ্যায় বেড়াতে আসা সৌম্যজিৎ বসু ও পার্থ বিশ্বাসের অপহরণ এবং পাহাড় থেকেই তাঁদের দেহ উদ্ধারের ঘটনার পরে ওই এলাকায় আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে চাইছেন না বিভিন্ন পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশিক্ষকের কথায়, “সংবাদ মাধ্যমে অযোধ্যা পাহাড়ের পরিস্থিতির যে খবর পড়ছি, তাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওখানে গেলে তো প্রতি পদেই বিপদের আশঙ্কা রয়ে যায়। পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন তো হয়নি। ডিসেম্বর মাসেই অযোধ্যা পাহাড়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াই চলেছে মাওবাদীদের।” |
এই প্রেক্ষিতে ট্রেকারদের বক্তব্য, “অযোধ্যা পাহাড়ে মাঝেমধ্যেই গুলি চলছে। এর পরে কোন সাহসে আর ওখানে যাব?” পর্বতারোহীদের সেই আনাগোনা যে আর নেই তা স্বীকার করেছেন ট্রেকিং-এর ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে নজর রাখা দফতরের আধিকারিকরা। পুরুলিয়ার ডিএফও অজয়কুমার দাস বলেন, “কয়েক বছর ধরে অযোধ্যা পাহাড়ে ট্রেকিংয়ের জন্য খুব কম লোকজন আসছেন।”
ফলে ট্রেকারদের গন্তব্য এখন রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়। গত আড়াই দশক ধরে পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আসানসোলের বিশ্বদেব ঘোষ। তিনি বলেন, “আগে বহু বার গিয়েছি অযোধ্যার পাখিপাহাড় বা মাঠাবুরু পাহাড়ে। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে ভরসা পাচ্ছি না। প্রচুর সমস্যা রয়েছে ওখানে।” তবে জয়চণ্ডী পাহাড়ে আসার ক্ষেত্রে অবশ্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও অন্যতম কারণ। তবে জয়চণ্ডীতে ট্রেকিংয়ের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বদেববাবুরা মনে করছেন। তাঁর কথায়, “জয়চণ্ডীর রক-ফেসগুলো ভাল। ট্রেকিংয়ের উপযোগী।” তবে শিক্ষার্থী অপূর্ব মাহাতো, সঞ্চিতা মিত্র কিংবা সোমা বিশ্বাসরা জানান, জয়চণ্ডীতে পানীয় জল, আলো, রাস্তাঘাটের সমস্যা রয়েছে। তাঁদের কথায়, “জল কিনে খেতে হচ্ছে, আলো না থাকায় রাতে সমস্যা হচ্ছে। এগুলি থাকলে অনেক সুবিধা হত।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন বলেন, “আমি জানি, জয়চণ্ডী পাহাড়ে বহু ট্রেকার আসেন। যদিও এখানে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে, তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ও পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে জল ও আলোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।” |