গুয়াহাটি শহরের বুকে শিলপুখুরি এলাকায় কাল চিতাবাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়েছিলেন চার জন। তাঁদের মধ্যে দেবকুমার দাস কাল রাতে মারা গিয়েছেন।
কাল দুপুরে বাড়ির সামনে রোদে বসে কাগজের পাতায় চোখ বোলাচ্ছিলেন দেবকুমার বাবু। নবগ্রহ শ্মশান এলাকা থেকে তাড়া খেয়ে চিতাবাঘটি চলে আসে সেখানে। পঞ্চাশ বছরের এই প্রৌঢ়ের মুখ ও মাথায় থাবা চালিয়ে দেয় চিতাবাঘটি। তাঁর মাথার ডান দিক, ঘাড় ও কান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। চিতাবাঘকে রড নিয়ে তাড়া করতে গিয়েছিলেন কৃপেশ দাস। চিতাবাঘের থাবার আঘাতে তাঁর মাথার চুল-সহ এক খাবলা মাংস উড়ে যায়। এরপর আরও তিন জনকে জখম করে বাঘটি দোকানে ঢুকে পড়ে।
থাবার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও প্রাক্তন আইনজীবী দেবকুমার দাস জ্ঞান হারাননি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে ভর্তি হতে বললেও তিনি কেবল মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে বাড়ি চলে আসেন। বেলা তিনটে অবধি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা শোনান।
সংবাদপত্রে তাঁর রক্তাক্ত ছবি ছাপা হলে ডিব্রুগড়ের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা মা ও পরিবারের অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন ভেবে দেবকুমারবাবু নিজের ছবি তুলতে দেননি। প্রতিবেশীরা জানান, রাত অবধি চিতাবাঘের কাণ্ড নিয়ে পড়শিদের সঙ্গে গল্প করে দেবকুমার ঘুমোতে যান। আজ অনেক বেলা অবধি ঘুম না ভাঙায় পড়শিরা তাঁর দরজা ভেঙে ঢুকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখতে পান। হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানায়, চিতাবাঘের আক্রমণের সময় দেবকুমারবাবু মদ্যপ অবস্থায় থাকায় সম্ভবত আঘাতের গুরুত্বকে পাত্তা দেননি। কাল রাতেও তিনি মদ্যপান করেন। হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ভুল করেছেন তিনি।
ঠিক কী কারণে তাঁর মৃত্যু হল জানতে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, খারগুলি পাহাড় ও রাজভবনের মাঝামাঝি এলাকায় একাধিক চিতাবাঘের বসত। বন দফতর ব্যবস্থা না নিলে ফের চিতাবাঘ জনবসতি এলাকায় ঢুকে পড়বে। মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) এস পি সিংহ বলেন, “মানুষ পাহাড় কেটে ঘর বানিয়ে, চিতাবাঘের বসতিতেই অনুপ্রবেশ চালাচ্ছে। ফলে চিতাবাঘ ও মানুষের সংঘাত বাড়বেই।” তাঁর পরামর্শ, চিতাবাঘ দেখলে বন দফতরকে খবর দিলেই দুই পক্ষের মঙ্গল। ওই চিতাবাঘটিকে মানস জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। |